ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি জোর করে দখলের পর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও মাদারীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করায় পাঁচ জন আদালতে মামলা করেছেন। এমপি থাকা অবস্থায় জোরজবরদস্তির প্রতিবাদ করলে হামলা ও মামলা ভয় দেখানো হয় বলে অভিযোগ তাদের। দেরিতে হলেও আদালতের কাছে ন্যায় বিচার পাওয়া আশা করছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- ড. আবদুস সোবহান গোলাপ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সভাপতি, অধ্যক্ষ এবং আনারনেছা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের সভাপতি ও অধ্যক্ষ। আর উত্তর রমজানপুর মডার্ন একাডেমির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক এবং তৈয়ব আলী, শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক।
জানা গেছে, আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ একাদশ সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ থেকে জয়লাভ করেন। এমপি থাকা অবস্থায় কালকিনির উত্তর রমজানপুর নিজ এলাকার সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর তাহমিনা বেগমের কাছে হেরে যান। এবার তার নিজ নামে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একদিনেই আলাদা পাঁচটি মামলা করেছেন পাঁচ ভুক্তভোগী।
মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে মাদারীপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদুল হক চৌধুরীর আদালতে ভূমি আইনে মামলা করেন- সাকিব হাসান, এ বি এম সালাউদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম নুরুল আলম, রেহেনা বেগম ও মাসুম বেপারী।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সংসদ সদস্য থাকাকালে জোরপূর্বক নিজ ও পরিবারের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ। জমি লিখে না দেওয়ায় হত্যা ও মামলারও ভয় দেখানো হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। পরে রেজিস্ট্রি না করেই নির্মাণ করেন একাধিক ভবন। এমপি থাকায় মুখ খুলতে সাহস পাননি এলাকার মানুষ।
মামলাকারী এ বি এম সালাউদ্দিন বলেন, ভূমি দখল প্রতিকার আইন অনুযায়ী আমরা পাঁচ জন আট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। আশা করছি, আদালত ন্যায় বিচার করবে। আমার পৈতৃক সম্পত্তি জোর করে নিয়ে ভবন নির্মাণ করেছে সাবেক সংসদ সদস্য।
মেজর (অব.) বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম নুরুল আলম বলেন, গোলাপ মিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে সময় তার রাজনৈতিক শক্তির কারণে আমরা কেউ জমির কাছাকাছিও যেতে পারিনি। তার তাণ্ডবের কারণেই অনেক মানুষ বাড়িঘরেও থাকতে পারেননি। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে থাকেন। যখন এমপির ক্ষমতা কমতে থাকে, তখন এলাকার লোকজন বাড়িতে আসে। গোলাপ মিয়া যে জমিগুলো দখলে নিয়েছে, এই জমি তিনি বা তার প্রতিষ্ঠানের নামে কোনও জমি নাই। একজন এমপি গরিবের জমি এভাবে দখল করবে এটা কখনই কাম্য নয়।
মামলাকারী আরেকজন বলেন, আমরা গোলাপের এই অন্যায়ের বিচার চাই। ক্ষমতা পেয়ে কৌশলে জমি দখলে নেওয়া এর বিচার হতেই হবে। আর আমাদের জমি আদালতের মাধ্যমে ফেরত চাই।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আল আমিন প্রিন্স জানান, মামলার বাদী সবাই কালকিনির উত্তর রমজানপুরের বাসিন্দা। আর একই মৌজায় দখল হওয়া জমির পরিবার পাঁচ একর ৭৪ শতাংশ। চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত আট জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পিবিআইকে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপ দাবি করেন, তাকে হেয় করতেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ একাধিক মামলা করছে। আর অন্যায়ভাবে কারও জমি দখল করে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেননি।
তার দাবি, যাদের জমি রয়েছে, সেসব জমি অর্থের বিনিময়ে অথবা কেউ স্বেচ্ছায় দান করেছে। জমির পরিবর্তে কিছু ব্যক্তিকে অন্য জমি দেওয়া হয়েছে। এর আগেও নিজের জমি দাবি করে অনেকে আদালতে মামলা করেছে, সেই মামলাও নিষ্পত্তি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে রায় দিয়েছে। কিন্তু আবারও এই মামলা উদ্দেশ্যমূলক।