সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ারের বাড়িতে আগুন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল গুঁড়িয়ে উচ্ছ্বাস
বাংলাদেশ

সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ারের বাড়িতে আগুন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল গুঁড়িয়ে উচ্ছ্বাস

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের রাজশাহীর বাঘার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজশাহী কলেজে থাকা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দিয়ে উল্লাস করেছেন শিক্ষার্থীরা।  

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার চকসিংগা এলাকার শাহরিয়ার আলমের চারতলা বাড়িটিতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে বাড়িটি পুড়ে যায়। যদিও ৫ আগস্টেও পর থেকে এই বাড়িটি ছিল অক্ষত।  

বাড়ির কেয়ারটেকার জসিমউদ্দিন বলেন, ‌‘দুপুর ১২ দিকে একদল লোক এসে বাড়ির সামনে জড়ো হয়। এরপরে তারা বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। পরে তারা অগ্নিসংযোগ করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।’

এ বিষয়ে বাঘা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাসায় গিয়ে আগুন নেভানো হয়েছে।’ 

বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে ওই এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসে সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছেন।’

এদিকে, রাজশাহী কলেজে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী কলেজের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণের এই ম্যুরাল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে অংশ নেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় লোকজন। ম্যুরালটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর নেচেগেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা।

এর আগে সকাল থেকে ম্যুরালটির সামনে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১টা  ৫৫ মিনিটে ‘জয় বাংলা, জিতবে আবার নৌকা’ গানের তালে তালে নেচেগেয়ে ম্যুরালটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে একদল শিক্ষার্থী ভেঙে পড়া সেই ম্যুরালের ওপরে নেচেগেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকেন।

শেখ মুজিবুর রহমানের ২৫ ফুট উঁচু ও প্রস্থ ২২ ফুটের ম্যুরালটিকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ‘আবক্ষ ম্যুরাল’ বলে দাবি করা হতো। ম্যুরালটি নির্মাণে ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কলেজ প্রাঙ্গণে এটির উদ্বোধন করা হয়েছিল।

অপরদিকে, ২০২১ সালে রাজশাহী কলেজে শিল্পী সৈয়দ মামুন-অর-রশিদকে দিয়ে ‘উদয়াস্তে বাংলাদেশ’ নামে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫ ফুট প্রস্থের টেরাকোটা করা হয়। টেরাকোটায় ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাঙালির ঐতিহাসিক দিনের চিত্র তুলে ধরা হয়। বুধবার রাতে টেরাকোটা থেকে শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি তুলে ফেলেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন দুটি আবাসিক হলসহ মোট চারটি আবাসিক হল এবং শেখ রাসেল স্কুল মডেল স্কুলের নামফলক ভেঙে নতুন নাম দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ড. শামসুজ্জোহা চত্বরে মিলিত হয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে পর্যায়ক্রমে চারটি হল ও স্কুলে গিয়ে নেমপ্লেট, উদ্বোধনী ফলকে ভাঙচুর করেন। রাত ১১টার দিকে কর্মসূচি শেষ হয়।

নামফলক ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম দেওয়া হয়েছে বিজয়-২৪ হল, নির্মাণাধীন এ এইচ এম কামরুজ্জামান হলকে শহীদ আলী রায়হান হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম দিয়েছেন ফাতিমা আল-ফিহরিয়া, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলকে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল এবং শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নামফলকও ভাঙচুর করে রিয়াগোপ মডেল স্কুল নাম দেন শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাত ৯টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ড. শামসুজ্জোহা চত্বরে মিলিত হতে শুরু করেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে উপস্থিত হন। এ সময় তারা হলটির নামফলক, উদ্বোধনী ফলকসহ শেখ মুজিবের চিহ্ন সংবলিত স্থাপনাগুলো ভেঙে দেন। পর্যায়ক্রমে নির্মাণাধীন এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল ও শেখ হাসিনা হলের নামফলক ভেঙে দেন।

এরপর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের হলের নামফলক ভেঙে নতুন নাম দিতে গেলে ওই হলের আবাসিক কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিপত্তি ঘটে। কয়েকজন ছাত্রী ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় সেখানে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরে আসলে প্রক্টরের উপস্থিতিতে হলের ছাত্রীরা পরিবর্তীত নামের ব্যানার আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেন। সর্বশেষ শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নামফলকও ভাঙচুর করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাবির অন্যতম সমন্বয়ক ফাহিম রেজা বলেন, ‘আমার ভাইদের রক্তে রঞ্জিত রাজপথ শুকানোর আগেই খুনি হাসিনা পুনরুজ্জীবিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপ্লবী শিক্ষার্থীরা খুনি হাসিনার সাংস্কৃতিক বিচরণ মুছে ফেলতেই এ কর্মসূচি পালন করলাম।’

সার্বিক বিষয়ে রাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘যা যা হয়েছে, তার সঙ্গে প্রশাসনের সম্পৃক্ততা নেই। আর প্রশাসন যদি কোন হলের নাম পরিবর্তন করে, সেটি সিন্ডিকেট মিটিংয়ে পাস হয়ে তারপর পরিবর্তন হবে।’

Source link

Related posts

তিস্তায় হু হু করে বাড়ছে পানি

News Desk

মিয়ানমার থেকে এলো ১৯ টন চাল, কাগজপত্রের অভাবে পড়ে আছে বন্দরে

News Desk

‘মানুষ হত্যায় দ্বিধা নেই’ এমন ব্যক্তিদের খুঁজছে রাশিয়ার ওয়াগনার

News Desk

Leave a Comment