রাজধানীসহ সারাদেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু সংক্রমণই নয়, এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও বাড়ছে। চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনেই (১০ আগস্ট পর্যন্ত) রেকর্ড দুই হাজার ৩২১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে যেখানে শুধু জুলাই মাসেই হাসপাতালে ভর্তি হন দুই হাজার ২৮৬ জন।
এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে সরকারিভাবে এখনও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘোষণা আসেনি। ১৮ জনের ডেঙ্গু সন্দেহে মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে মৃত্যুগুলো পর্যালোচনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ঢাকা শিশু হাসপাতালে চারজন, ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে চারজন, স্কয়ার হাসপাতালে ছয়জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে একজন ও বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে একজন মারা যান। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম বিভাগে দুজনের মৃত্যু হয়।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর হোসেন জানান, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যস্ত থাকায় ডেঙ্গু সন্দেহ মৃতদের নিয়ে পর্যালোচনা কমিটি সভা করতে পারেনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে নয়জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মে মাসে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন, জুলাইয়ে দুই হাজার ২৮৬ জন এবং আগস্টে (১০ আগস্ট পর্যন্ত) দুই হাজার ৩২১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। ১ জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে মোট চার হাজার ৯৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন চার হাজার ৪৬ জন।
এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও ২২৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ২১১ জন ঢাকায় ও ১৫ জন ঢাকার বাইরের হাসপাতালে। এ নিয়ে সারাদেশের হাসপাতালে ভর্তি মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯১৫ জনে। এদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ৮৫২ জন ও ঢাকার বাইরে ৬৩ জন।
সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় ভর্তি ২১১ জনের মধ্যে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ৭৫ জন, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ১৩৬ জন রয়েছেন। অন্যদিকে ঢাকার বাইরের ১৫ জন রোগীর মধ্যে ঢাকা বিভাগে (ঢাকা জেলা ব্যতীত) আটজন, চট্টগ্রাম বিভাগে চারজন ও খুলনা বিভাগে তিনজন রয়েছেন।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস শুরু থেকেই দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছেন। ডেঙ্গু মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা ও বাসাবাড়িসহ যে সব স্থানে ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে তাদের আর্থিক জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।