খুলনায় বিনা লাভের দোকানে ক্রেতারা স্বস্তি নিয়ে পণ্য কিনছেন। রবিবার (২৭ অক্টোবর) খুলনার গল্লামারী ও শিববাড়ি মোড়ের দোকানে এমন চিত্র দেখা গেছে। গল্লামারী হল রোড মোড়ে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। দোকানটি সোয়া ৯টায় শুরু হয়। আর শিববাড়ি মোড়ের দোকান শুরু হয় পৌনে ১০টার দিকে।
বিনা লাভের এ দোকানে আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৭৫ টাকা, দেশি রসুন ২১৫ টাকা, মসুর ডাল ১০০-১০৫ টাকা কেজি, প্রতিপিস লাউ ৪০ টাকা, লালশাক ২৫-৩০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৫০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।
কিন্তু বাজারে মসুর ডাল ১২০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১৩০ টাকা, রসুন ২৪০-২৬০ টাকা, লালশাক ৬০-৭০ টাকা, লাউ ছোট ও মাঝারি ৪০ টাকা, বড় ৬০ টাকা (পিস), পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২০০-২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গল্লামারী পয়েন্টে সবজি কেনা শায়লা রহমান বলেন, ‘আমার মেয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বিনা লাভের দোকানের খবর পেয়ে দেখতে আসি। দেখে ভালো লাগলো। দামও সাশ্রয়ী, যা বাজারদর থেকে কম। তাই কিছু কিনলাম।’
মো. আল আমিন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘বাজারদর থেকে এখানে অনেক কম দামে পণ্যসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। তাই ভালো লাগলো। কিছু কিনলাম।’
শিববাড়ি পয়েন্ট থেকে সবজি কেনা জোড়াগেটের আব্দুল খালেক বলেন, ‘বাজারদর থেকে এখানে পণ্যের দাম বেশ কম। তাই এখান থেকে সবজি কিনলাম।’ আলী হোসেন নামে আরেকজন বলেন, ‘বাজারে কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা পোয়া। আর এখান থেকে ৪০ টাকায় পেলাম।’
শিববাড়ি মোড়ের দোকানি আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সিন্ডিকেট ভাঙতে আমরা জনতার পাশে থাকতে পাইকারি দরে পণ্য কিনে ওই দরেই বিক্রি করছি। আর যারা বাজারের ব্যাগ সঙ্গে আনছেন না, তাদের টোকেন শাস্তি হিসেবে ৫ টাকার ব্যগে ১০ টাকা নেওয়া হয়। পাশাপাশি পলিথিন বর্জনের জন্যও দোকান থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’
গল্লামারী হল রোড মোড়ের দোকানি শাহীন চৌধুরী বলেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি এই বিনা লাভের দোকানে সময় দেওয়ার একটাই কারণ, তা হলো জনমনে স্বস্তি ফেরানো। আর এই স্বস্তি আনা সম্ভব বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। যা সফল করতে হলে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙা জরুরি। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার পক্ষ থেকে এই কাজটি করতে তৎপর রয়েছি।’
উল্লেখ্য, গত ১৮ অক্টোবর শিববাড়ি মোড় থেকে বিনা লাভের দোকান চালু হয়। সেদিন একটি পয়েন্টে ছিল। ২৭ অক্টোবর থেকে ৬টি পয়েন্টে এই দেকান চালু হয়। যা এখন থেকে নিয়মিত চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার সমন্বয়করা। এ ঘোষণা অনুযায়ী ২৭ অক্টোবর সকালে শিববাড়ি মোড় ও গল্লামারী হল রোড মোড়ে দোকান চালু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য পয়েন্ট দৌলতপুর বাসস্ট্যান্ড, খালিশপুর বিআইডিসি রোড চিত্রালী মার্কেট, বয়রাবাজার মোড়, নতুনবাজার মোড়ে এ দোকান পর্যায়ক্রমে চালু করা হয়। এ পয়েন্টগুলোতে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা ও বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পণ্য বিক্রি করার পরিকল্পনা রয়েছে শিক্ষার্থীদের। এসব পয়েন্টে ডাল, ডিম, রসুন, পেঁয়াজ, আলু, কাঁচা মরিচসহ ৩-৪ প্রকার সবজি রাখা হচ্ছে। যা সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করা হয়। সকল ধরনের ক্রেতা এসব পয়েন্ট থেকে প্রয়োজনমতো পণ্যসামগ্রী কিনতে পারছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার বাজার নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের সদস্য হৃদয় ঘরামী বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে “বিনা লাভের দোকান” বসানো হয়েছে। খুলনার সব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা এই কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ভাঙতে এই উদ্যোগ। প্রথম দিন পণ্য পাওয়ায় বিলম্ব হওয়ায় দোকান চালু করতে সময় লাগে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার সমন্বয়ক মুহিবুল্লাহ মুহিব বলেন, ‘বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। যতদিন বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না ততদিন আমাদের কার্যক্রম চালু থাকবে। হাতবদলে প্রতিটি স্তরে স্তরে দাম বৃদ্ধি পায়, তাই সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পণ্য আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। মানুষের মুখে হাসি ফুটছে, এতেই আমরা আনন্দিত। আমরা সবাই যদি সচেতন হই, তাহলে এই বাজার সিন্ডিকেট রুখে দেওয়া সম্ভব।’