টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের পাঁচটি উপজেলা। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। এবার সবচেয়ে বেশি বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা।
এসব উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও এবার নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে সিলেট নগরবাসীর মধ্যে। ইতোমধ্যে সিলেট নগরের তালতলা এলাকার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কার্যালয়ে পানি উঠেছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের পাশে থাকার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ইউনিয়নভিত্তিক মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও সার্বিক পরিস্থিতির ওপর সতর্কতার সঙ্গে নজর রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জসহ আরও দুটি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে গোয়াইনঘাটে ১৩টি, জৈন্তাপুরে ৩টি, জকিগঞ্জে ৮টি, কানাইঘাটে ৯টি, কোম্পানীগঞ্জে ৩টি, বিয়ানীবাজারে ৫টি ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার ১টি ইউনিয়ন রয়েছে। এ সকল উপজেলায় বন্যায় আক্রান্ত জনসংখ্যা ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন। এর মধ্যে জকিগঞ্জে ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫২, জৈন্তাপুরে ৬৫ হাজার, গোয়াইনঘাটে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০, কানাইঘাটে ৮০ হাজার ৬০০, কোম্পানীগঞ্জে ৯৩ হাজার, বিয়ানীবাজারে সাড়ে ৫ হাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জসহ ১৩টি উপজেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র। এর মধ্যে জকিগঞ্জ রয়েছে ৫৫টি, জৈন্তাপুরে ৪৮টি, গোয়াইনঘাটে ৫৬টি,কানাইঘাটে ৩১টি, কোম্পানীগঞ্জে ৩৫টি, বিয়ানীবাজারে ৬৭টি, গোলাপগঞ্জে ৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকা ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে ওসমানীনগরে ২৩টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ২৯টি, সিলেট সদরে ২৯টি, দক্ষিণ সুরমায় ৪৪টি, বালাগঞ্জে ১৫টি ও বিশ্বনাথ উপজেলায় ৫৮টি।
সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার ৪ হাজার ৮০২ জন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে জকিগঞ্জে ৯৫ জন, জৈন্তাপুরে ৬৭৫ জন, গোয়াইনঘাটে ২ হাজার ৩৫৬ জন, কানাইঘাটে ১ হাজার ৪৬৬ জন, কোম্পানীগঞ্জে ১৩৫ জন, বিয়ানীবাজারে ৬০ জন ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ১৫ জন রয়েছেন।
এদিকে, সিলেটের প্রধান প্রধান পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, ‘গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানিতে তলিয়ে সিলেটের জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে সাদাপাথর, জাফলং, বিছানাকান্দিসহ অন্যতম পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় পর্যটন স্পটগুলোতে যাওয়ার পরিবেশ নেই। এ কারণে সিলেটের প্রধান প্রধান পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের পাঁচটি উপজেলা গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলার বন্যাদুর্গত বাসিন্দাদের জন্য এক হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ৭৫ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ আড়াই লাখ টাকা ত্রাণসামগ্রী হিসেবে বরাদ্দ করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব উপজেলায় আরও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার এক জরুরি সভায় জনস্বার্থে সিলেট সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তিন টন চিড়া, তিন টন মুড়ি, গুড়, খাবার পানি, পানি বিশুদ্ধ করার ট্যাবলেট এবং ওরস্যালাইন ক্রয় করা হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ ছাড়াও তিনি মসজিদ, মন্দিরসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় বিশেষ মোনাজাত/প্রার্থনা করার জন্য নগরবাসীর কাছে অনুরোধ জানান।