সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত সাইদুলের বিষয়ে যা বলছে পরিবার
বাংলাদেশ

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত সাইদুলের বিষয়ে যা বলছে পরিবার

সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার গামারিতলা গ্রামের যুবক সাইদুল ইসলাম আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের পাশে পাহাড়ি ছড়ায় বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিএসএফের গুলিতে নিহত হন। ঘটনার পর বিজিবি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সাইদুল বাংলাদেশ থেকে ভারতে সুপারি পাচার করতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে মারা যায়। তবে নিহত সাইফুলের পরিবার অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, হারিয়ে যাওয়া গরু খুঁজতে গিয়ে তিনি পাহাড়ি ছড়ার পাড়ে গিয়েছিলেন, পরে বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করে।

জানা গেছে, সেদিন ছিল স্থানীয় চিনাকান্দির বাজারের সাপ্তাহিক হাট। গ্রামের বেশির ভাগ পুরুষ হাটে চলে যান সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে। সে সময় গ্রামে নারী আর শিশু-কিশোর ছাড়া কেউ বাড়িতে ছিলেন না। জিরো পয়েন্টের ক্ষেতখামারে কোনও মানুষ ছিল না। হঠাৎ গ্রামবাসী একসঙ্গে দুটি গুলির শব্দ শুনতে পান জিরো পয়েন্টের ছড়া এলাকা থেকে। সেখানে ছুটে যান গ্রামবাসী। তারা সাইদুলকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। বিএসএফের গুলিতে মারাত্মক আহত সাইদুলকে রক্ষার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে যান সাইদুলের আত্মীয় হানিফ মিয়া সেখানে। গ্রামসম্পর্কে হানিফ সাইদুলের ভাই হন। হানিফের পেছনে ছুটে যান গামারিতলা গ্রামের শিশু-কিশোর ও নারীরা। গ্রামবাসীকে আসতে দেখে বিএসএফ সদস্যরা একটি ফাঁকা গুলি করে তাদের তাড়িয়ে দেয়।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে হানিফ বলেন, ‘বুধবার (৮ ডিসেম্বর) বিএসএফের তিন জন সদস্য সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ভাঙা অংশ দিয়ে গামারিতলা গ্রামের পাহাড়ি ছড়ায় একটি স্থানে একজন এবং অন্যস্থানে দুই জন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য অবস্থান করেন। সাইদুল যখন নিখোঁজ গরুর খোঁজ নিতে ছড়া এলাকায় যান তখন এক মদ্যপ সীমান্তক্ষীর মুখোমুখি হন। সাইদুল বিএসএফকে জানায়, হারিয়ে যাওয়া গরুর খোঁজে সে ছড়ায় এসেছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়। একপর্যায়ে ছড়ার নিচে থাকা মদ্যপ বিএসএফ সদস্য ছড়ার উপরে তীরে থাকা সাইদুলকে পরপর দুটি গুলি করে।

‘গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে সাইদুলকে উদ্ধার করতে ছড়ার পাড়ে যাই আমি। গিয়ে দেখি, গুলিবিদ্ধ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। বুলেটের আঘাতে তার বুক ও কোমর থেকে রক্ত মাটি গড়িয়ে ছড়ার পানিতে পড়ছে। রক্তাক্ত সাইদুল আমার কাছে পানি খেতে চায়। বেশ কয়েকবার পানি খাওয়ার কথা বলে। পরে তার কথা বন্ধ হয়ে যায়। সংজ্ঞাহীন সাইদুলকে মৃত ভেবে গুলি করা বিএসএফ সদস্য দুই হাত ধরে টেনেহিঁচড়ে ভারতে নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন সাইদুলের দুই পা ধরে টেনে ধরে রাখি আমি। টানাহেঁচড়ার এক পর্যায়ে ছড়ায় লুকিয়ে থাকা আরও দুজন বিএসএফ সদস্য আসে সাইদুলকে ভারতে নিয়ে যেতে। তাদের সঙ্গে জোরাজুরি করে ছড়ার পাড় থেকে ক্ষেতের আইল দিয়ে টেনে সাইদুলকে গামারিতলা গ্রামের কাছে নিয়ে আসি। তখনও সাইদুলের শরীর থেকে রক্ত বেয়ে পড়ছিল। পরে গ্রামবাসী এগিয়ে এসে দ্রুত তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।’

হানিফ আরও জানান, এরপর বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরের দিনের বেলায় উচ্চশক্তির ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে সীমান্ত এলাকার নজদারি করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিভক্তকারী সীমারেখা র‌্যাডক্লিফ লাইনে সারি সারি লোহার খুঁটিতে কুড়ি স্তরে লাগানো আছে ধারালো কাঁটাতার। প্রায় আট থেকে দশ ফুট উঁচু এই বেড়ার পাশে রয়েছে বিএসএফের আলাদা টহল সড়ক। কাঁটাতারের বেড়ার শত গজের মধ্যে সড়কের পাশে রয়েছে বিএসএফের নজরদারি পোস্ট। আধুনিক অস্ত্র নিয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিচ্ছে তারা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভাল করতে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তারা গাড়িতে চড়ে সার্বক্ষণিক টহল কার্যক্রম ও সীমান্ত এলাকায় বিশেষ নজদারি করছেন।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে সাহিদাবাদ নালিকাটা সীমান্তহাটে সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাকারিয়া কাদির এবং বিএসএফের ১৯৩ ব্যাটিলিয়নের অধিনায়ক শ্রী রাজিব কুমারের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে বিজিবি এ হত্যাকাণ্ডের কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার দাবি করেন। উভয় পক্ষের আলোচনার পরে বিএসএফ অধিনায়ক জানান, সীমান্তে হত্যার ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও পুলিশের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তদন্ত শেষে গুলি করার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

Source link

Related posts

১০‌ এক‌র পাহাড় কেটে তৈরি হচ্ছে ইটভাটা

News Desk

পাহাড়ের এক উপজেলায় ৯ হাজার মানুষ পানিবন্দি, রান্না করে খাবার দিচ্ছে বিএনপি

News Desk

মাশরাফির ভোটের মাঠ কেমন?

News Desk

Leave a Comment