ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সুনামগঞ্জের প্রায় ২২০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছয় দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছেন জেলার লাখ লাখ মানুষ। এখনও উপজেলার সঙ্গে জেলার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে পানি কমলেও দুর্ভোগ কাটেনি বন্যাদুর্গতদের। বিভিন্ন এলাকার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ২২০০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৮৪ কিলোমিটার সওজের। বাকি ২০০০ কিলোমিটার সড়ক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি)।
জেলা সড়ক ও জনপথ কার্যালয় সূত্র জানায়, সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের ৬৮ কিলোমিটারের মধ্যে সুনামগঞ্জ অংশে রয়েছে ৪০ কিলোমিটার। এ সড়কের অধিকাংশ ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গোবিন্দপুর-ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কের ২৭ কিলোমিটার পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কের পূর্ব পাশে অবস্থিত ‘দেখার হাওর’। পাহাড়ি ঢলে হাওর উপচে প্লাবিত হয়েছে মহাসড়ক ও গোবিন্দপুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম। বিধ্বস্ত হয়েছে বাঁশ ও মাটির ঘর। সেইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক।
এছাড়া দোয়ারাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কের ১৮ কিলোমিটার, সুনামগঞ্জ কাচিরগতি-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের ১৬ কিলোমিটার, নিয়ামতপুর-তাহিরপুর সড়কের ১৭ কিলোমিটার, সুনামগঞ্জ-জামালপুর সড়কের ১৯ কিলোমিটার, মদনপুর-দিরাই-শাল্লা সড়কের ২৬ কিলোমিটার এবং পাগলা-জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ-আউশকান্দি সড়কের ৩০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এলজিইডি জানায়, জেলায় এলজিইডির অধীনে থাকা চার হাজার ৫৭১ কিলোমিটারের মধ্যে দুই হাজার ৮৫০ কিলোমিটার সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে দুই হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু সড়ক ভেঙে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। পানির স্রোতে ভেসে গেছে ব্রিজ-কালভার্ট। এ জন্য সুনামগঞ্জ সদর থেকে উপজেলাগুলোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেশিরভাগ সড়ক এখনও পানির নিচে। তবে ইতোমধ্যে যেসব সড়ক থেকে পানি নেমেছে সেগুলোর অধিকাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করা যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য আমরা দুটি পরিকল্পনা অধিদফতরে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে স্বল্প মেয়াদে সড়ক মেরামতের জন্য ২৬ কোটি টাকার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। স্থায়ীভাবে সড়ক মেরামতের জন্য ৩০০ কোটি টাকার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ইট-বালু-পাথরসহ সংস্কারকাজের মালামালের সংকট রয়েছে। অন্যান্য জেলা থেকে যদি প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে আসা যায় এবং এক সপ্তাহের ভেতরে পানি নেমে যায়, তাহলে এক মাসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামত করে ফেলবো আমরা।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘জেলায় আমাদের মোট সড়ক চার হাজার ৫৭১ কিলোমিটার। এর মধ্যে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে দুই হাজার ৮৫০ কিলোমিটার। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পিচঢালা সড়কে যানবাহন চলাচলের ফলে বিটুমিন উঠে গিয়ে তৈরি হচ্ছে বড় বড় গর্ত। পানি নেমে গেলে এগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করা হবে।’