চলছে জ্যৈষ্ঠ মাস, এখনো আসেনি বর্ষার সু-বাতাস। বর্ষা আসবে বলে গাইবান্ধার নৌকার কারিগররা নৌকা তৈরিতে ও মেরামত কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের মনে এখন আনন্দ উল্লাস বিরাজ করছে। কেন না বছরের অন্য মাস গুলো তাদের যেমনি কাটুক তারা বর্ষার আগমনের অপেক্ষায় থাকে।
প্রকৃতির নিয়ম অনুয়ায়ী আর মাত্র একমাস পরই নদীতে পানি বাড়তে শুরু করবে । সে কারণে পূর্ব প্রস্তুতি মোতাবেক সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তার নদী তীরবর্তী গ্রামের জেলে ও মাঝিরা নৌকা মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছে । নৌকা, নদী আর পানির সাথে যুদ্ধ করে যাদের জীবন সংসার, দুর্যোগে নেই তাদের কোন ডর। এমনি এক গল্প শোনালেন উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কাশিম বাজার গ্রামের আকবর আলী।
তিনি বলেন, বছরের ছয় মাস নদী পথে নৌকায় চলাচল করতে হয়। বাকী ছয় মাস খেয়াঘাটে মুল নদী নৌকায় পার হতে হয়। তাছাড়া ধূ-ধু বালু চরে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়। চরবাসি বার মাসের দুঃখ এবং কষ্ট যেন চিরচারিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন চরের অনেক পরিবারের নিজস্ব নৌকা রয়েছে। বেশির ভাগ নৌকা জেলে এবং নৌ-শ্রমিকরা ভাড়ায় চালায়। আর দুই এক মাস পরেই বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। সে কারণে নৌকা মেরামত করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, একটি বড় এবং ছোট নতুন নৌকা তৈরি করতে ২ লাখ হতে ৫০ হাজার টাকা লাগে। নৌকা মেরামত শ্রমিক আবুল হোসেন জানান, তাদের দিন হাজিরা ৬০০ টাকা। একটি নতুন নৌকা তৈরি করতে ২০ দিন সময় লাগে। মেরামতে ৩ হতে ৪ দিন সময় লাগে।
এখন ইউকিলিকটাস গাছের কাঁঠ দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। এছাড়া আলকাতরা, বার্নিশসহ নানাবিধ উপকরণ প্রয়োজন হয়। তিনি ৩৫ বছর ধরে আবুল হোসেন চরে নৌকা মেরামত করে আসছেন। হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জিমি জানান, নাব্যতা সংকটে নৌকার ব্যবহার অনেকটা কমে গেছে। আজ থেকে ২০ বছর আগে নৌকার ব্যবহার ছিল ব্যাপক। তিনি বলেন চরবাসির জীবন যাত্রায় নৌকা একটি নিত্য প্রয়োজনীয় উপকরণ। তাই প্রতিবছর বন্যা আসার আগে নৌকা চরবাসির একটি গুরুত্বপূর্ন রুটিন কাজ হয়ে দাড়িছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোহাম্মদ আল মারুফ জানান, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে তিস্তা নদী প্রবাহিত। বন্যার সময় চলাচলের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। সে কারণে নৌকা বন্যার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে নৌকাসহ বিভিন্ন উপকরণ প্রস্তুত রাখা একান্ত প্রয়োজন।