ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে ঝড়বৃষ্টি হলেও বড় ধরনের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি মোংলায়। তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বিকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে এখানকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ঝড়বৃষ্টির কারণে শুক্রবার ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত পৌর শহরের প্রধান বাজারে তেমন লোকজন ছিল না। শহরের দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ।
পরিবেশ আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, সুন্দরবন উপকূলে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি আঘাত হেনেছে। এতে নিম্নাঞ্চলের কিছু ফসল ও শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে প্রতিবারের মতো সুন্দরবন ঢাল হয়ে প্রতিরোধ করায় মোংলায় বড় ধরনের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব শুক্রবার ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত ছিল। এ সময়ে বৃষ্টিতে শহর ও শহরতলীর নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বিকাল ৩টার পর থেকে কমে যায় বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাস। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাতাস না থাকলেও মাঝেমধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, মিধিলির প্রভাবে শুক্রবার বন্দরে অবস্থানরত ১৫টি বিদেশি জাহাজের পণ্য ওঠানামা ও পরিবহন বন্ধ ছিল। শনিবার থেকে স্বাভাবিক হবে বন্দরের কার্যক্রম। উপকূলীয় চাষিরা জানিয়েছেন, মোংলার বেশিরভাগ মানুষের আয়ের উৎস চিংড়ি চাষ। প্রতিবার ঘূর্ণিঝড়ের সময় বৃষ্টিতে চিংড়ি ঘেরের মাছ বেরিয়ে আর্থিক ক্ষতি হলেও এবার কারও ঘেরের মাছ বের হয়নি। কোনও এলাকা প্লাবিত হয়নি। তবে কিছু শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টিতে ঘেরগুলোতে পানি বেড়েছে, তবে ডুবে মাছ ভেসে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আজ রাতে যদি বৃষ্টিপাত হয় সেক্ষেত্রে নিম্নাঞ্চলের কিছু ফসলের ক্ষতক্ষতির আশঙ্কা করছি আমরা। মোংলা উপকূলের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি ও বাতাসের তীব্রতা থাকলেও আমাদের এলাকার কোথাও গাছপালা ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। জোয়ারের পানির চাপ ছিল না। ফলে রাস্তাঘাট, বেড়িবাঁধের কোনও ক্ষতি হয়নি। একই কথা বলেছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জাফর রানা। তিনি বলেন, মিধিলি খুব বেশি শক্তিশালী না হওয়ায় উপজেলার কোনও ঘরবাড়ি, গাছপালা, রাস্তাঘাট ও বাঁধের ক্ষতি হয়নি।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ছিল বলে জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশ। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে আমাদের লোকজন ও স্বেচ্ছাসেবী ছিল। কোথাও কোনও ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন আমাদের মায়ের মতো, প্রতিবারই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় বলে মোংলা এবং দক্ষিণাঞ্চলে বড় ধরনের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয় না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুর আলম শেখ। তিনি বলেন, সুন্দরবন বিভিন্ন সময়ে বুক পেতে ঝড়-জ্বলোচ্ছাস মোকাবিলা করে আমাদের রক্ষা করে। এবারও তাই করেছে। মিধিলির গতি কমিয়ে দিয়েছে। তাই আমরা নিরাপদে আছি। কাজেই সুন্দরবন রক্ষায় সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।