বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগে সুপারিশকৃত দলীয় সব নেতাকর্মীর নাম না আসায় রাজশাহীর তানোরে বিএমডিএর কার্যালয় ভাঙচুর করে তালা দিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বুধবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
তানোর উপজেলা বিএনপির তিন নেতার নেতৃত্বে ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে। বাইরে থেকে প্রধান ফটকে তালা মেরে চাবি নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিজান।
এর আগে বুধবার দুপুরে তারা বিএমডিএর তানোর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। ফলে বুধবার বিএমডিএর তানোর কার্যালয়ে বাইরে থেকে কেউ ঢুকতে পারেননি। আবার যারা ভেতরে ছিলেন, তারাও আটকা পড়েন। বিএনপির নেতারা বলেছেন, তাদের অনুমতি ছাড়া তানোরের বাতাসও নড়াচড়া করতে পারবে না। তাদের অনুমতি ছাড়া কোনও সরকারি কর্মকর্তা কাজ করতে পারবেন না। কাজ করার আগে তাদেরকে জানিয়ে অনুমতি নিতে হবে। বিএমডিএর কর্মকর্তা ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিএমডিএর তানোর জোনাল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিএমডিএর অধিকাংশ গভীর নলকূপের আগের অপারেটরকে তাড়িয়ে দিয়ে দখল তা করেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। ফলে রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে মৌসুমের সেচ কর্মসূচিতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। তানোর এলাকায় বিএমডিএর ৫৩৬টি গভীর নলকূপ রয়েছে। বিএমডিএর প্রধান কার্যালয়ে পরিচালনা ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন হলে নতুন করে অপারেটর নিয়োগের নোটিশ জারি করা হয় অক্টোবর মাসে।
গত ১৫ নভেম্বর ছিল অপারেটর পদে আবেদনের শেষ দিন। তানোরের ৫৩৬টি গভীর নলকূপের মধ্যে বর্তমানে সচল রয়েছে ৫১৬টি। এসব নলকূপের অপারেটর পদে আবেদন পড়ে এক হাজার ৬৯৪টি। পর্যায়ক্রমে অপারেটর প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ৩১ ডিসেম্বর অপারেটর নিয়োগের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ নিয়োগে তানোরের স্থানীয় কতিপয় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে আগেই নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এসব বিএনপি নেতার সুপারিশকৃত অধিকাংশ প্রার্থী যাচাই-বাছাই এবং ভাইভায় বাদ পড়েন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তানোরের ৫১৬টি নলকূপে অপারেটর পদের আবেদনকারীদের অধিকাংশই বিএনপির জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দের সুপারিশ নিয়ে আবেদন জমা দেন। মঙ্গলবার ফল প্রকাশের পর দেখা গেছে, তানোরের বিএনপি নেতাদের সুপারিশকৃত আবেদনকারীদের অনেকে বাদ পড়েছেন। এ নিয়ে বাদ পড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা বুধবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিলসহ বিএমডিএর কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন।
এই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন তানোর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখেরুজ্জামান হান্নান, সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন। বিক্ষোভকারীরা বিএমডিএ কার্যালয়ের দিকে বাইরে থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালান। এ সময় বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিজান বাইরে থেকে বিএমডিএ কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা মেরে দেন। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভেতরে আটকা পড়েন। পরে বিএনপি নেতারা কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে বক্তব্য দেন।
সমাবেশে বিএনপি নেতা মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘এখন থেকে তানোরে বিএনপির কথা ছাড়া বাতাসও নড়াচড়া করতে পারবে না। আমরা যাই বলবো তাই করতে হবে কর্মকর্তাদের। বিএনপি নেতা মফিজ উপস্থিত নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে আরও বলেন, আপনাদের দখলে যেসব গভীর নলকূপ আছে, সেগুলির দখল ছাড়বেন না। আমরা যা বলবো সেটাই করতে হবে কর্মকর্তাদের। আগামী রবিবারের মধ্যে নতুন অপারেটর নিয়োগ বাতিল করে যাদের দখলে আছে, আমাদের সেসব নেতাকর্মীর নামে দিতে হবে।
বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিজান বিএমডিএর জোনাল প্রকৌশলী জামিলুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন সমাবেশে। প্রকৌশলী জামিলুর রহমানকে বরখাস্ত করারও দাবি জানান তিনি। মিজান বলেন, ‘আমাদের কথামতো অপারেটর দিতে হবে। তা না হলে বিএমডিএর এই কার্যালয়ের তালা খোলা হবে না। চাবি আমার কাছে আছে। আমরা রবিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। এরপর বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখেরুজ্জামান হান্নান বলেন, ‘এই অপারেটর নিয়োগ আমরা মানি না। আমাদের সুপারিশকৃত প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমডিএর তানোর অফিসের সহকারী প্রকৌশলী জামিলুর রহমান বলেন, ‘অপারেটর নিয়োগে শৃঙ্খলা ফেরাতে নতুন অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি এ ক্ষেত্রে কাজ করেছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ কমিটির কারও একক সিদ্ধান্ত ছিল না। আমরা যোগ্যদেরই নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যারা বঞ্চিত হয়েছেন তারা বিক্ষোভ করেছেন এবং কার্যালয়ে তালা দিয়েছেন। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
বিএমডিএ কার্যালয়ে তালা মারার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা কার্যালয়ে তালা দিয়েছিল। বিকালে আমি চাবি দিয়ে দিয়েছি। অপারেটর নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা আমাদের দাবি নিয়ে বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে বসবো। আগামী রবিবার পর্যন্ত তানোরে নতুন অপারেটর নিয়োগ বাতিল না হলে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবো।’