ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সূর্যমুখী ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য মোহিত করে তুলেছে ভ্রমণ পিপাসু সাধারণ মানুষকে। প্রতিদিন বিকালে নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের রসুলপুর সূর্যমুখী ফুলের বাগানে নারী-পুরুষসহ ভ্রমণ পিপাসু মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। তাদের কেউ প্রিয়জনের সঙ্গে সেলফি তুলছেন। কেউ আবার ফুলের সৌন্দর্যের সঙ্গে আনন্দঘন মুহূর্তকে মোবাইলফোনের ক্যামেরায় বন্দি করে রাখছেন। সব মিলিয়ে ফুলের সৌন্দর্যে পর্যটকেরা যেন ক্ষণিকের জন্যে হারিয়ে যাচ্ছেন এক অপার্থিব আনন্দলোকে। দর্শনার্থীদের মুখেও যেন ছড়িয়েছে সূর্যমুখীর হাসি।
এদিকে কৃষকেরা বলছেন অল্প পুঁজিতে সূর্যমুখী চাষে অধিক লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা। কৃষি বিভাগ বলছে আগামীদিনে ভালো ফলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নাটঘর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে সূর্যের মতো হাঁসি দেওয়া হলুদ গালিচা ছড়ানো ফুলের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে প্রতিদিন বাগানে ভিড় করছেন ভ্রমন পিপাসুরা। তাদের কেউ মোবাইলফোনের ক্যামেরায় সেলফি তুলছেন। কেউ আবার প্রিয় মুহূর্তকে মোবাইলফোনের ভিডিওতে স্মৃতি হিসেবে ধারণ করে রাখছেন। প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে ফুলের সৌন্দর্য আর সৌরভ গ্রহণ করে আপ্লুত হয়ে পড়েছেন বিনোদন প্রিয় পর্যটকেরা।
সূর্যমুখী বাগানে ছবি তুলছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সরকার পাড়ার বাসিন্দা জামির হোসেন। তিনি বলেন, এখানে আসার পর দেখলাম জায়গাটি খুব সুন্দর। সূর্যমুখী বাগানে প্রথমবারের মতো এলাম পরিবার নিয়ে। আমরা খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারছি। সুর্যমূখী ফুল দেখেও খুব ভালো লাগলো।
ফয়সাল আশিক নামে আরেক পর্যটক বলেন, ফুল দেখে খুব ভাল লেগেছে। এখানে ঘুরতে এলে মানুষ নিরাশ হবে না। এই ফুল থেকে আবার তেল তৈরি হয়। এই তেল খুব দামী। একইসঙ্গে তেল ও ফুল দুটাই খুব ভালো। মানুষের উচিত বেশি বেশি করে সূর্যমুখী চাষ করা।
ইমরোজ নাহার নামে এক শিক্ষিকা বলেন, এই প্রথম আমি এমন জায়গায় আসলাম। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। তবে দশানার্থীদের অনেকে ফুল ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে। এসব করা ঠিক না। কারণ ফুল গাছেই সুন্দর।
বাগান মালিক জয়নাল আবেদিন জানান, এখানে তিন খানি জায়গায় আমরা প্রথমবারের মতো সুর্যমূখী চাষ করেছি। জমি চাষে আমাদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কিছু ফুল নষ্ট হয়েছে। তবে সে ফুল এখন গাছে আছে তা দিয়ে আশা করছি লাভবান হতে পারবো। তিনি আরও জানান, এককানি (৩০ শতাংশ) জমিতে সরিষা চাষ করতে যেমন তেল হয় সুর্যমূখীতেও তাই হবে। তেল বিক্রি করে লাভবান হলে আগামীতে চাষ আরও বাড়াবো।
সূর্যমুখী বাগানে পর্যটকদের আনাগোনার কথা উল্লেখ করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রবিউল হক মজুমদার বলেন, সুর্যমূখী চাষ জমির উর্বরতার জন্য ভালো। এতে পোকামাকড় আক্রমণ করে কম। বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক চাষাবাদ হলে পর্যটকদের তৎপরতা কমে আসবে। আশা করছি আগামীতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা থেকে আরও ভালো বীজ আসবে। ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আগামী দিনে উন্নত জাতের সূর্যমুখী চাষাবাদের পরিকল্পনার কথা জানান কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর ৫১৬ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রতিকূল আবাহাওয়ার কারণে ২৪৬ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে ১৮৭ মেট্রিকটন তেল উৎপাদন সম্ভব বলে জানা গেছে।