Image default
বাংলাদেশ

সেতু ঝুঁকিতে ফেলে চলছে বালু উত্তোলন

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দরগামী সড়কে দুধকুমার নদের ওপর নির্মিত প্রায় ১৩০ বছর পুরনো সোনাহাট সেতু। ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু আরও ঝুঁকিতে ফেলে সেতু থেকে কয়েকশ মিটার দূরে ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু উত্তোলন। দুধকুমার নদের তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের কাছেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তবে এতে পাউবো কিংবা সড়ক বিভাগ ড্রেজার উচ্ছেদে উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০, এর ৪ এর (খ) ধারায় বলা হয়েছে, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। অথচ ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুর ১২০ মিটার ভাটিতে দুধকুমার নদের ওপর সড়ক ও জনপথ বিভাগ নির্মাণ করছে সোনাহাট সেতু। পাশেই নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ করছে পাউবো।

স্থানীয়রা জানায়, সোনাহাট সেতুর পশ্চিম-দক্ষিণ প্রান্তে পাউবো ব্লক ফেলে দুধকুমার নদের ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করছে। নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ চলমান। অথচ তীর সংলগ্ন এসব ব্লকের পাশেই অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন বালু ব্যবসায়ী শাহজাহান আলী সোহাগ। ড্রেজার দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ সোনাহাট সেতু আরও ঝুঁকিতে পড়ছে। 

পাউবোর ব্লকগুলোর স্থানচ্যুতি ঘটে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তীর রক্ষার কাজ। শুধু সেতু কিংবা নদীর তীর রক্ষা প্রকল্প নয়, ঝুঁকিতে পড়েছে তীরবর্তী বাসিন্দাদের বসতভিটা, ফসলি জমি ও কলার বাগান। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা না করেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সম্প্রতি সোহাগ ড্রেজার কিনে বালুর ব্যবসা শুরু করেছেন। তিনি অন্তরালে থেকে অন্যদের দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। কিন্তু সেতু আর তীর রক্ষা প্রকল্পের এত কাছ থেকে বালু উত্তোলন করায় ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে। স্থানীয়রা ঝামেলা এড়াতে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে পারছেন না।’

তবে ড্রেজারের মালিকানা ও বালু উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শাহজাহান আলী সোহাগ। তিনি বলেন, ‘আমার কোনও ড্রেজার নেই। আমি কোনও বালু উত্তোলন করছি না। কারা বালু উত্তোলন করছে তাও জানি না। যারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লক তৈরি ও জিও ব্যাগে বালু ভর্তির কাজ করছেন তারা বালু উত্তোলন করতে পারেন।’

তবে ড্রেজারের তত্ত্বাবধান ও বালু উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত স্থানীয় আরেক বালু ব্যবসায়ী মাসুদ রানা বলেন, ড্রেজারটির মালিক সোহাগ। আমি শুধু দেখভাল করছি। আর বালু উত্তোলন করে পাউবোর জিও ব্যাগ ভর্তির কাজের ঠিকাদারকে দেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি ঠিকাদারের নাম বলতে পারেননি।

মাসুদ রানা বলেন, ‘ড্রেজারের মালিক ও বালু উত্তোলনের চুক্তি সোহাগের সঙ্গে হয়েছে। আমি শুধু লোকবল দিয়ে দেখাশোনা করছি। এই বালু তুলে স্তূপ করা হচ্ছে। সেখান থেকে ঠিকাদার জিও ব্যাগে ভরবেন।’

সওজের কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সোনাহাট সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য আমরা এর কাছেই নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।’

পাউবোর কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাছ থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলার নিয়ম নেই। আমি লোক পাঠিয়ে এটি দ্রুত বন্ধ করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

উল্লেখ্য, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার পূর্ব দিকে উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ৪০০ মিটার দীর্ঘ সোনাহাট সেতু অবস্থিত। ১৮৮৭ সালে ইংরেজরা লালমনিরহাট থেকে ভূরুঙ্গামারী হয়ে ভারতের মনিপুর রাজ্যে চলাচলের জন্য গোয়াহাটি পর্যন্ত যে রেলপথ স্থাপন করে, তারই অংশ হিসেবে দুধকুমার নদের ওপর সোনাহাট রেলওয়ে সেতু তৈরি করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা এই সেতুর একটি অংশ ভেঙে দেন। পরবর্তী সময়ে আশির দশকে সেতুটি মেরামত করা হয়। বর্তমানে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সড়ক সেতুর মতই ব্যবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন মালবাহী ভারী যান চলাচলসহ সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে পাথর ও কয়লাবোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে শতবর্ষী সেতুটি বর্তমানে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। 

স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর কুড়িগ্রাম সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় দুধকুমার নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। তার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হিসেবে দুধকুমার নদের ওপর পুরাতন সেতুর ভাটিতে নতুন সোনাহাট সেতু নির্মাণ করছে সওজ।

Source link

Related posts

ঈদ বিনোদনে প্রস্তুত গাজীপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলো

News Desk

১৩০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৩৯ নারী-পুরুষ

News Desk

আমাদের ২২ শতাংশ বনায়ন সৃষ্টি হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

News Desk

Leave a Comment