সেতু ভেঙে সেতু নির্মাণ, অপচয় সাত কোটি টাকা
বাংলাদেশ

সেতু ভেঙে সেতু নির্মাণ, অপচয় সাত কোটি টাকা

মাত্র সাত বছর আগে খুলনা শহরের প্রবেশদ্বার গল্লামারী এলাকায় ময়ূর নদীর ওপর সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল একটি অপরিকল্পিত সেতু। পানির স্তর থেকে সেতুটির উচ্চতার পরিমাপ ঠিক রাখা হয়নি। যে কারণে নদীতে নৌকা চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে সাত কোটি টাকা গচ্চা দিয়ে সেতুটি ভেঙে সেখানেই ৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দে নতুন দৃষ্টিনন্দন আর্চ সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। আর্চ সেতুটি নদীর পানির স্তর থেকে ৫ মিটার উচ্চতা, ৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২০ মিটার প্রস্থে ২ লেনের হবে।

সড়ক ও জনপথ সূত্র জানায়, মহানগরীর প্রবেশদ্বার ময়ূর নদীর ওপর থাকা ব্রিটিশ আমলের প্রথম সেতু নির্মিত হয়। কালক্রমে যানবাহনের চাপ বাড়ায় ওই সেতুর পাশেই ২০১৬ সালে আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় সেতুটি নির্মাণের পর থেকেই পানির স্তর থেকে উচ্চতা নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। পাশাপাশি খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়। এ অবস্থায় দুটি সেতুই ভেঙে সেখানে দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘সাত বছর আগে ময়ূর নদীর ওপর গল্লামারী এলাকায় যে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল তা ছিল অপরিকল্পিত। এত নিচু কোনও সেতু হতে পারে না। সে কারণে ওই টাকা এখন গচ্চা যাচ্ছে। অপরিকল্পিত এমন কাজের মাধ্যমে সরকারি অর্থ অপচয়ের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।’

সওজের খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ জানান, নতুন সেতু নির্মাণের আগে গল্লামারীতে যে দুটি সেতু রয়েছে, সেগুলো ভেঙে ফেলা হবে। নতুন সেতু নির্মাণের জন্য আগস্ট মাসের প্রথম দিকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রক্রিয়া শেষ করে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দুই লেনের সেতুটির দৈর্ঘ্য ৭০ মিটার এবং প্রস্থ ২০ মিটার। নদীর পানির লেভেল থেকে সেতুর উচ্চতা ৫ মিটার। নদীর মধ্যে কোনও পিলার থাকবে না। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। কাজ শেষ করতে হবে দেড় বছরে।

তিনি বলেন, ‘ময়ূর নদী খননে খুলনা সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনা রয়েছে। সেতুটির নিচ দিয়ে যেন নৌযান চলাচল করতে পারে, নতুন আর্চ সেতুতে সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিআইডব্লিউটি’র “নেভিগেশনাল ক্লিয়ারেন্স” নেওয়া হয়েছে।’

সওজ সূত্রে জানা গেছে, গল্লামারীতে ময়ূর নদীর ওপর ব্রিটিশ আমলে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ওই সেতুর পাশে ২০১৬ সালে আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ব্যয় হয় সাত কোটি টাকা। কিন্তু সেতুটি নির্মাণ করা হয় নদীর পানির লেভেল থেকে মাত্র পাঁচ ফুট ওপরে। এর ফলে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ২০২০ সালের আগস্টে সেতুটি ভেঙে ফেলার সুপারিশ করে বিআইডব্লিউটিএ। সে সময় বিআইডব্লিউটি’র ছাড়পত্রও নেওয়া হয়নি।

খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ১২ অক্টোবর দুপুরে নগরীর গল্লামারীতে খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কে ময়ূর নদীর ওপর বিদ্যমান সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন কংক্রিট সেতুর স্থলে দুই লেন বিশিষ্ট স্টিল আর্চ সেতু নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণে খুলনার নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এসব নদী খনন করার মধ্য দিয়ে নদীর তীরে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার।’

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতায় সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। একই ধারাবাহিকতায় খুলনাঞ্চলেরও ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। খুলনা মহানগরীকে দৃষ্টিনন্দন তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্যও আমরা কাজ করছি।’ তিনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য আগামী জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আবারও বিজয়ী করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল যৌথভাবে ফলক উন্মোচন ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে গল্লামারী সেতুর নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন।

Source link

Related posts

সিলেট বিভাগে বন্যা আক্রান্ত ১৩ লাখ মানুষ

News Desk

‘ব্রিটিশ রানি আমার চিঠির উত্তর দিলেন’

News Desk

এক কোটিরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান হবে অর্থনৈতিক অঞ্চলে : প্রধানমন্ত্রী

News Desk

Leave a Comment