দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই অংশ হিসেবে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনাসহ ১৩টি সুপারিশ বাস্তাবায়নে নিদের্শ দেয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়। এছাড়া জেলা থেকে বিভিন্ন সংস্থার পাঠানো প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অর্ধশত সম্ভাব্য সুপারিশও চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আপতত ১৩টি সুপারিশ বাস্তবায়নে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মো.নাসিম আহমেদ।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ১৩টি সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- সেন্টমার্টিনে সব ধরনের অবকাঠামো ও সম্প্রসারণ বন্ধ থাকবে, তবে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ব্যতিত (স্থানীয়দের ইকোলজিক্যালি বসতবাড়ি ও হাসপাতাল ছাড়া কোনও অবকাঠামো করা যাবে না, দ্বীপের পরিষ্কার পরিছন্নতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা, শব্দ ও বায়ু দূষণ রোধে কাজ হবে। এছাড়া জোনিং ও সংরক্ষিত এলাকা নির্মাণ, হোটেল-মোটেল ও রেস্ট হাউস নির্মাণ, যান চলাচল ব্যবস্থাপনা, ১০ হাজার ম্যানগ্রোভ ও কেয়ারি বেষ্টনি বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি, জমি ব্যবহার নীতিমালা, জেটি ব্যবস্থাপনা, পর্যটক জাহাজ পরিবহন, দ্বীপের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সুপারিশগুলো নিয়ে কাজ করা হবে।
এসব সুপারিশে বিস্তারিত উল্লেখ করে বাস্তবায়নে অধীনস্থ সংস্থাদের নিজ নিজ দায়িত্ব দ্রুত পালনের নির্দেশনা রয়েছে।
সভায় বক্তব্য দেন, জেলা পুলিশ সহকারী (ট্রাফিক) এসএম রকীব উর রাজা, টেকনাফের ইউএনও পারভেজ চৌধুরী, পরিবেশ অধিদফতরের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পারভীন ও ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
তবে এর আগে গত মাসের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনকে বাচাঁতে একটি বৈঠক হয়। সেখানে দ্বীপ রক্ষায় কঠোর ১৩টি সম্ভাব্য সুপারিশ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকসহ দ্বীপের অধীনস্থ সংস্থাকে নির্দেশ পালনে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাসিম আহমেদ বলেন, ‘প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে জীববৈচিত্র্য রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ভৌগলিক কারণে এই দ্বীপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে দ্বীপ অতিঝুঁকিতে আছে। সরকার চায় খুব দ্রুত প্রবাল দ্বীপের ভালো ম্যানেজমেন্ট। এ লক্ষ্যে গত মাসের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় দ্বীপ রক্ষায় বেশ কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। তারই সূত্র ধরে দ্বীপে সরেজমিনে এসে সুপারিশ বাস্তবায়নে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়া ইকোট্যুরিজমসহ দ্বীপে সরকারের যে মহাপরিকল্পনা রয়েছে। সেটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে কার্যক্রম চলছে।’
বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা বাস্তবায়নে দ্বীপবাসী সহাতায় করবে। পাশাপাশি দ্বীপের বাসিন্দাদের রুটি-রুজির বিষয়টি মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। আমরাও চাই দ্বীপে কোনও নতুন করে ভবন না হোক। কারণ দ্বীপ না বাচঁলে, দ্বীপের বাসিন্দাগুলো থাকবে কোথায়? তাছাড়া সম্প্রতি সময়ে জেলা প্রশাসকের কাছে দ্বীপবাসির পক্ষে থেকে বেশ কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো যাতে চূড়ান্ত নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তারও দাবি জানাই।’
সুপারিশ বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদফতর, কউক (উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ), জেলা পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, মৎস্য অধিদফতর, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, কোস্টগার্ড, জেলা-উপজেলা পরিষদসহ অধীনস্থ সব সংস্থা কাজ শুরু করছে। এসব কার্যক্রমে অগ্রগগতি বাস্তবায়নে মনিটরিং করবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়।