দুই ধাপে প্রায় ২০ দিন ধরে খোঁজাখুঁজির পরেও কোনও সোনা পাওয়ার নিশ্চিত তথ্য মেলেনি। অবশেষে উপজেলা প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারির মাধ্যমে আপাতত থেমে গেলো ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে দিনরাত ধরে সোনা খোঁজার উন্মাদনা।
এভাবে মাটি খুঁড়ে সোনার খোঁজ অবাধে চলতে দিলে ঘটনাস্থলে মারামারি, খুন, জখমসহ আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে এই আশঙ্কায় আরবিবি ইটভাটা ও তার আশপাশের এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
গত কয়েকদিন ধরে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার আরবিবি ইটভাটায় সোনার খোঁজে দিনরাত মাটি খুঁড়ছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। নিরাপত্তাঝুঁকি চিন্তা করে সেই ইটভাটায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। শনিবার (২৫ মে) রাত সাড়ে ১০টা থেকে এ আদেশ কার্যকর হয়েছে। রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রকিবুল হাসান এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
শনিবার রাত ও রবিবার (২৬ মে) সকাল থেকে মাইকিং করে এ আদেশের কথা জনসাধারণকে জানানো হয়েছে ও হচ্ছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাণীশংকৈল থানার ৫ নম্বর বাচোর ইউনিয়নের অন্তর্গত কাতিহার বাজারের উত্তর পাশে রাজোর গ্রামে মো. রুহুল আমিনের মালিকানাধীন আরবিবি ইটভাটায় মাটির স্তূপ খুঁড়ে সোনা পাওয়া যাচ্ছে—এমন খবরে স্থানীয় মানুষজনসহ আশপাশের বিভিন্ন জায়গার অসংখ্য মানুষ বে কিছুদিন ধরে খুন্তি, কোদাল ইত্যাদি দিয়ে মাটি খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে। প্রতিদিন সেই জায়গায় তারা সোনার সন্ধান করছে। লোকজন সোনা পাওয়ার আশায় ঝগড়া-বিবাদ ও দ্বন্দ্বে লিপ্ত হচ্ছেন।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রতিদিন মানুষজন মাটি খুঁড়ে সোনার সন্ধান করতে থাকলে যেকোনও সময় ঘটনাস্থলে মারামারি, খুন, জখমসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইটভাটা এলাকা ও এর আশপাশে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার কাতিহার আরবিবি ইটভাটায় গত কয়েকদিন ধরে চলছে মাটি খনন প্রতিযোগিতা। গ্রামের বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ বাড়ি থেকে কোদাল নিয়ে ওই ভাটায় আসছেন এবং ভাটার ইট তৈরির জন্য স্তূপ করে রাখা মাটি খুঁড়ে সোনা খুঁজছেন। এদের মধ্যে শ্রমিক শ্রেণির মানুষই বেশি। নিজেদের জীবন ধারণের জন্য পেশাগত কাজ ফেলে এরা সোনার আশায় দিনরাত এখানেই পড়ে থাকছিলেন। অতিরিক্ত গরমে অনেকেই অসুস্থও হয়ে পড়ছিলেন।
খুন্তি-কোদাল নিয়ে হাজার হাজার মানুষ দিনরাত মাটি খুঁড়ছে। সবাই বলছে, এখানে নাকি সোনা পাওয়া গেছে। কিন্তু কেউ সুনির্দিষ্টভাবে দেখাতে পারেনি। জানাতে পারেনি কে পেয়েছে, কতটা পেয়েছে , যা পেয়েছে তা আদৌ সোনা নাকি সোনাসদৃশ অন্য কিছু। কিছুই পরিষ্কার না হলেও শুধু গুজবের ওপর ভর করে হাজার হাজার মানুষ এই কাজ করে থমকে দিয়েছে একটা ইটভাটার কার্যক্রম। কেউ কেউ এই লোভে দূরদূরান্ত থেকে এখানে এসেছেন। তবে কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, অনেকেই পেয়েছেন কিন্তু আমি পাইনি। এ গুজবও ছড়িয়ে পড়েছে যে, যারা পাচ্ছে সেটা সরকার জানলে জব্দ করে নিতে পারে এই ভয়ে প্রচার করছে না। এতে করে খেটে খাওয়া মানুষের পণ্ডশ্রম হচ্ছিল।
ওই ইটভাটার ম্যানেজার আসাদুজ্জামান লিটনের অভিযোগ, ভাটা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে সোনা সোনা বলে এ ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই মেলেনি। পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ঠাকুরগাঁও সম্পূর্ণ বন্যামুক্ত একটা জেলা। যেখানে মাটিতেই সোনা ফলে সেখানে মনোযোগ দিয়েই অনেকে গাড়ি-বাড়ি, সোনাদানার মালিক হয়েছেন। সোনার হরিণের পেছনে তাই এই ছোটাছুটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। পরিশ্রম, বিদ্যা-বুদ্ধি ও মেধা নিয়োগ করেই সম্পদ অর্জন করতে হবে।’