দিনাজপুরের বিরামপুরের শৌলাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক মাহবুবার রহমানের বিরুদ্ধে। পরে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাড়ির নির্মাণ কাজ বন্ধ করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা অফিস।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিরামপুর উপজেলার দিওড় ইউনিয়নের শৌলাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৮৯ সালে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা হয়। নিবন্ধন শর্ত অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক মাহবুবার রহমান ১৯৯৩ সালের নভেম্বর মাসে দলিল নম্বর-৫৩০৩ মোতাবেক ২৯ শতাংশ জমি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর দানপত্র দলিল মূলে রেজিস্ট্রি করে দেন। এর দু’বছর পর ১৯৯৪ সালে একই দাগে আবারও ৩৩ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে দেন প্রধান শিক্ষক। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়।
তবে অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের ৬২ শতাংশ জমির মধ্যে ৩৩ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের নামে দেখিয়ে বাকি ২৯ শতাংশ নিজের বলে প্রধান শিক্ষক দখল করে নিয়েছেন। সম্প্রতি ওই স্থানে বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেন তিনি।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। পশ্চিম দিকে বিদ্যালয়ের নতুন একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আর স্কুলের মাঝখানে শিশুদের জন্য রয়েছে খেলার মাঠ। সেই মাঠের মাঝের অংশে সিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে বাড়ি নির্মাণ শুরু করেন ওই বিদ্যালয়েরই প্রধান শিক্ষক মাহাবুবার রহমান।
বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগে আমাদের স্কুলে খেলার মাঠ ছিল। আমরা ক্রিকেট, ফুটবল, গোল্লাছুটসহ নানাধরনের খেলাধুলা করতাম। কিন্তু এখন সেই মাঠে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে আমাদের খেলার জায়গা নষ্ট হয়েছে। আমরা চাই মাঠে যেন বাড়ি নির্মাণ না হয়।
দিওড় গ্রামের সাবেক প্রধান শিক্ষক জিন্নাত আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি জানতাম এটি স্কুলের মাঠ। এখানে স্কুলের ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলা করতো। এখন কীভাবে কি হয়েছে, তা আমি বলতে পারবো না। স্কুলের মাঠে বাড়ি নির্মাণে শিক্ষার পরিবেশ খারাপ হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা মতিউর ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা জানি এটি স্কুলের মাঠ ও সরকারি সম্পত্তি। কিন্তু হঠাৎ স্কুলমাঠে বাড়ি নির্মাণ শুরু হয়। এতে শিশু-কিশোরদের খেলার জায়গা নষ্ট হয়েছে। এছাড়া স্কুলের মুখে বাড়ি নির্মাণ করায় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসা-যাওয়ায় সমস্যা হবে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইমরুল কায়েস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, স্কুলটিতে দুইবারে দলিলের মাধ্যমে ৬২ শতক জমি দেওয়া হয়েছে। প্রথমবারে জমি দেওয়া ছিল ২৯ শতক। পরে জমি দেওয়া হয় ৩৩ শতক। ২০১১ সালে হওয়া অডিটের কপিতেও স্কুলের জমি ৬২ শতক বলে উল্লেখ আছে। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহবুবার রহমান ওই ৬২ শতককে কেটে ৩৩ শতক করে রেখেছেন। স্কুলের জমি হলো সরকারি সম্পদ। প্রধান শিক্ষক তা ভোগদখল করতে পারেন না। উনি স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে বাড়ি নির্মাণ করছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবার রহমান দাবি করেছেন, স্কুলের জায়গা ৩৩ শতক, আর আমি আমার জায়গাতেই বাড়ি বানাচ্ছি। তবে কে বা কারা জানি অভিযোগ দিয়েছেন। বর্তমানে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়ে কাগজপত্র দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। কাগজপত্র জমা দিয়েছি, যাচাইয়ের পর ইউএনও’র ফয়সালা দেওয়ার কথা।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিনারা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, স্কুলমাঠে বাড়ি নির্মাণের খবর পেয়ে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কাজ বন্ধ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিরামপুরের ইউএনও পরিমল কুমার সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শৌলাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ পাওয়ার পর কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। এ ঘটনায় গঠিত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।