প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের শর্তসাপেক্ষে অটোপাস দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আর অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের মতো করে পদ্ধতি আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। এসএসসি ও এইচএসসির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও অটোপাসের চিন্তা আছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন দেশে মোট কলেজ আছে দুই হাজার ২৬০টি। এর মধ্যে অনার্স মাস্টার্স কোর্স চালু আছে ৫৫০টিতে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষার্থী ২৭ লাখের অধিক।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: মশিউর রহমান মনে করেন, শিক্ষার্থীরা একই ক্লাসে বছরের পর বছর বসে থাকবেন, তা হয় না। তাতে তো কোনো লাভ নেই। তাদের বয়স বাড়বে আর একই শ্রেণীতে থাকবে এটার অবসান হওয়া দরকার। এ কারণে অনার্স প্রথম বর্ষে যারা আছেন তাদের শর্তসাপেক্ষে দ্বিতীয় বর্ষে প্রমোশন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। তিনি বলেন, তারা করোনার আগে একটি টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছেন। এখন তাদের প্রমোশন দেয় হচ্ছে। শর্ত হলো যে করোনা পরস্থিতি যখন স্বাভাবিক হয়ে আসবে তখন সবাইকে সশরীরে পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে হবে।
তিনি জানান, করোনার মধ্যে তারা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন বর্ষ ও অনার্স মাস্টার্সেও একইভাবে অটোপাসের চিন্তা করছেন। আর এর মধ্যে যদি অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার গ্রহণযোগ্য ও অনুমোদিত সফটওয়্যার এসে যায় তাহলে তো আর সমস্যা থাকে না।
স্কুলেও অটোপাস
গত বছর এসএসসি পরীক্ষা করোনার আগেই হয়ে যায়। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষা করোনায় হয়নি। অটোপাস দেয়া হয়। এবার পরীক্ষার কথা বলা হলেও তা নিয়ে ব্যাপক সংশয় আছে। সবকিছু নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। এসএসসিতে এসাইনমেন্ট ভিত্তিক মূল্যায়নের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। কিন্তু এইচএসসির ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর অন্যান্য শ্রেণীতে যে যার মতো অনলাইন ও অ্যাসানমেন্ট ভিত্তিক মূল্যায়ন করছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত করোনা কমে না এলে এসএসসি ও এইচএসসিতে অটোপাস হতে পারে। তবে তাদের অ্যাসানমেন্ট দিয়ে মূল্যায়ন করা হবে।
পাবালিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস নিলেও চূড়ান্ত পরীক্ষার ব্যাপরে এখনো সবাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুলাই থেকে সশরীরে পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা করছে। তবে ফার্মেসি বিভাগ অনলাইনে পরীক্ষা নেবে। জগন্নাথ ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো কিছু পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা নিচ্ছে।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও করোনার দ্বিতীয় ওয়েভের কারণে পিছিয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কবে হবে ঠিক নেই। তবে বুয়েট শিফট করে সামাজিক দূরত্ব মেনে ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপুমনি বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। সংক্রমণ পাঁচ ভাগের নিচে না নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে না। এখন সংক্রমণের হার ১৩ ভাগের বেশি।
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় এবারো অটোপাস হবে কি না- এই প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা পরীক্ষা নিতে চাই। তবে সব কিছু নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর। পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তার ওপর সিদ্ধান্ত হবে।
ফলে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ এর জন্য সরকারের শিক্ষা বিভাগকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, প্রথমত এই দুই বছরেও তারা শিক্ষা সচল রাখার কোনো পদ্ধতি তৈরি করতে পারেনি। মূল্যায়ন বা পরীক্ষা তো পরের কথা। আগে তো শিক্ষার্থীদের শিখাতে হবে। তা না করে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরো কতদিন বন্ধ থাকবে, অটোপাস কীভাবে হবে এগুলো প্রচার করা হয়েছে। এতে শিক্ষার ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা না শিখলে অটোপাস দিয়ে কী লাভ?
তার মতে, এই সময়ের মধ্যে একটি পরীক্ষা পদ্ধতিও বের করা যেত। শিক্ষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দিয়ে সামাজিক দূরত্ব মেনে পরীক্ষাও নেয়া যেত। একাধিক শিফট করে এটা সম্ভব ছিল। আসলে করোনায় শিক্ষাকে গুরুত্বই দেয়া হচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান মনে করেন, অটোপাস কোনো সমাধান নয়। এতে শিক্ষার্থীরা হীনমন্যতা ও ট্রলের শিকার হতে পারেন। তাদের সঠিক মূল্যায়নের মধ্যে নিতে হবে। তিনি বলেন, এর অনেক পদ্ধতি আছে। এটা অ্যাসাইনমেন্ট ভিত্তিক হতে পারে। আবার অনলাইনেও হতে পারে। অনলাইন শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতি মানে ফেসবুক, হোয়টসঅ্যাপ ভিত্তিক নয়। এটারও আলাদা পদ্ধতি ও নিয়ম আছে। দুঃখজনক হলো, গত দুই বছরেও সেটা নিয়ে কোনো কাজ হয়নি। আর সামজিক দূরত্ব মেনে পরীক্ষা নেয়া যায় কি না তাও আমরা চেষ্টা করে দেখিনি। এটার কোনো প্রস্তুতিই নেয়া হয়নি। শুধু প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে অটোপাসের আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার।
সূত্র : ডয়েচে ভেলে
