স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিবেশ। আহত-নিহতদের স্বজনদের কান্নার রোল হাসপাতালজুড়ে। নিহতদের মধ্যে আছে, কারও বাবা, কারও ছেলে কিংবা কারও স্বামী ও নিকটাত্মীয়।
হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন নুর উদ্দিন। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন পাশে থাকা স্বজনরা।
নুর উদ্দিন জানান, তার ভাগিনা মো. হাবিবুর রহমান (২৩) মারা গেছেন সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে। দুর্ঘটনার সময় হাবিব ডিপোতে ছিলেন। পরে তার লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
নুর উদ্দিন বলেন, হাবিবুর রহমান বিএম কনটেইনার ডিপোর ইক্যুইপমেন্ট অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিল। ভোলা সদর থানাধীন বাংলাবাজার এলাকার শিহাব উদ্দিনের ছেলে। আট বছর ধরে এখানে চাকরি করছিল হাবিবুর।
ছেলেকে হারিয়ে আহাজারি করছেন মোমিনুল হকের অবসরপ্রাপ্ত বাবা ফরিদুল আলম চৌধুরী। মোমিনুল হক বিএম কনটেইনার ডিপোর কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি হাজী মোহাম্মদ মহসীন কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন।
এদিকে, চমেক হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আহত ও দগ্ধদের। সেখানেও আহতদের স্বজনদের চলছে আহাজারি।
অপরদিকে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে নিখোঁজদের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
নিখোঁজদের সন্ধানে অনেক স্বজন রাত থেকে খোঁজাখুঁজি করছেন চমেক হাসপাতালে। নিখোঁজের স্বজনরা মর্গে গিয়ে নিহতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু স্বজনদের খোঁজ পাননি তারা।
জিসান নামে এক ব্যক্তি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার খালাতো ভাই মো. হাসেম (৪৫) বিএম কনটেইনার ডিপোতে গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত। তার বাড়ি সীতাকুণ্ডের কুমিরায়। বিস্ফোরণে আহতদের যেসব হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে সবাই মিলে সেসব হাসপাতালে খোঁজ করেছি। কিন্তু সন্ধান পাইনি।
মো. শহিদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার ছোট বোনের স্বামী তৌহিদুল হাসান সুমন ডিপোতে অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিল। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার খোঁজ নেওয়ার জন্য চমেক হাসপাতালে এসেছি। সব লাশ দেখেছি, কোথাও তার লাশ নেই।
আবদুল মজিদ নামে এক বৃদ্ধা বলেন, আমার ছেলে রবিউল আলম (১৯) শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিল। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১২ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে একজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আছেন। নিহতদের মধ্যে তিন জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- মোমিনুল হক, মহিউদ্দিন ও হাবিবুর রহমান। বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।