ঢাকা-কক্সবাজার রুটে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন থেকে এক হাজার ২০ জন যাত্রী নিয়ে প্রথম ট্রেন ছাড়ে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার গোলাম রব্বানী।
এদিকে, স্বপ্নের ট্রেনে উঠতে এবং সেটি দেখতে সাধারণ নাগরিকদের জন্য রেলস্টেশন খুলে দেওয়ার পর সকালেই দূরদূরান্ত থেকে হাজারো মানুষ ভিড় করেন কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভিড় বাড়তেই থাকে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী টিকিট বিক্রির কার্যক্রম শুরু হলেও এরইমধ্যে আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত টিকিট বিক্রি শেষ বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
প্রথম ট্রেনের টিকিট পেয়ে উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা। যাত্রীদের বেশিরভাগই কোনও কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নয় বরং শুধু কক্সবাজার থেকে প্রথম রেলে চড়ার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন।
ঢাকার টিকিট করা যাত্রী পারভেজ আহমদ বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে প্রথম এই যাত্রা ইতিহাস হয়ে থাকবে। তাই আগে থেকে টিকিট বুকিং করে রেখেছি।’
শফিকুর রহমান নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘অনলাইনে টিকিটের জন্য আবেদন করলেও টিকিট বুকিং শেষ দেখানো হয়েছে। যার কারণে নিতে পারেনি। তবে প্রথম রেল ছোটার দৃশ্যটা দেখার জন্য সকাল থেকে এখানে আছি।’ ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত পর্যটকেরা।
কক্সবাজার থেকে ঢাকা যাওয়া সাতকানিয়ার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আবু বক্কর বলেন, ‘১৯৮০ সাল থেকে স্বপ্ন দেখছিলাম ট্রেন আসবে কক্সবাজার। অবশেষে সেই স্বপ্নপূরণ হলো। স্বপ্ন দেখা মানুষটি আজ কক্সবাজার থেকেই ট্রেনে চড়ে ঢাকা যাচ্ছি। স্বপ্ন সত্যি হওয়াই চোখের কোণে পানি চলে আসছে।’
কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার গোলাম রব্বানী বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে থেকে অনলাইন ও অফলাইনে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এখন শুধু ৯ ডিসেম্বরের পরের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। কক্সবাজার এক্সপ্রেসে ২০ বগিতে আসন সংখ্যা ৭৮০টি। প্রায় এক হাজার যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি যাত্রা করবে। চাহিদা বাড়লে বগিও বাড়ানো হবে।’
বাণিজ্যিকভাবে রেল চালু হওয়ায় কক্সবাজারে আগের তুলনায় দুই-তিনগুণ পর্যটক বাড়বে বলে মনে করছে সচেতন মহল। সমৃদ্ধ হবে পর্যটন শিল্প।
পর্যটকদের নিরাপত্তায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান, অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপদে আসা-যাওয়া নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম কাজ করবে। টহল টিমের পাশাপাশি থাকবে স্পেশাল ফোর্স। এ ছাড়া পর্যটকদের সুবিধার্থে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম, জরুরি সেবা ও হটলাইন।’
কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় কক্সবাজারবাসীর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। রেল চালুর মধ্য দিয়ে নতুন যুগে প্রবেশ করলো কক্সবাজার। এখন থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। পাশাপাশি এই রেল যোগাযোগ ঘিরে কক্সবাজারসহ দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে।’
কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন থেকে প্রথম বাণিজ্যিক রেলযাত্রা পরিদর্শনে আসেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাণিজ্যিকভাবে রেল চলাচল শুরু হলো। আন্তনগর এই ট্রেন ২০টি বগি নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে কক্সবাজার চলাচল করবে। চাহিদা বাড়লে বগিও বাড়ানো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান ট্রেনটিতে কোনও কেবিন সুবিধা নেই। এসি শোভন কোচে চেয়ার থাকবে পর্যাপ্ত। জানুয়ারি থেকে আরও কয়েকটি ট্রেন চালু হবে। তবে আপাতত লোকাল ট্রেন চালু হচ্ছে না।’
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার এক্সপ্রেস চট্টগ্রামে বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে এবং ঢাকায় পৌঁছবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। পর্যটন শহর থেকে রাজধানী ঢাকা যেতে সময় লাগবে ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিট। কক্সবাজার থেকে ঢাকা পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া এক হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের এক হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া ২ হাজার ৩৮০ টাকা।
গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার-দোহাজারি রেলপথে ট্রেন চলাচল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।