ঢাকার শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতির হত্যাকারী মাসুম মোহাম্মদ আকাশ গ্রেফতারের আগে নাম-পরিচয় গোপন করে বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছিলেন। ঠিক সময়ে গ্রেফতার না হলে এই হত্যাকারী ভারতে পালিয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা ছিল।
রবিবার (২৭ মার্চ) বগুড়া শহরের চারমাথা এলাকার খাজা হাইওয়ে নামে একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারের সময় নিজেকে প্রথমে মামুন নামে পরিচয় দেন এই খুনি। পুলিশের কাছে তার ছবি থাকায় নিজেকে আড়াল করতে পারেননি। সোমবার (২৮ মার্চ) দুপুরে বগুড়া সদর ফাঁড়ির এসআই খোরশেদ আলম রবি এসব তথ্য দিয়েছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, মাসুম চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার কাইশকানি গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে। স্ত্রী ও এক সন্তানসহ ঢাকার ৬০/১৫, পশ্চিম মাদারটেক এলাকায় বসবাস করতেন। বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাত ১০টার দিকে ঢাকার উত্তর শাজাহানপুর এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতি খুন হন। এরপর পুলিশ হত্যাকারী মাসুমকে গ্রেফতারে দেশের সব থানায় ছবিসহ তথ্য পাঠায়।
পুলিশ নিশ্চিত হয়, মাসুম বগুড়া শহরের সাতমাথায় খাজা নামে আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। সেখান থেকে হিলি বা অন্য কোনও সীমান্ত পথে ভারতে পালিয়ে যাবেন। এরপর বগুড়া সদর থানার ওসি সেলিম রেজার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল শহরের সাতমাথা ও আশপাশের আবাসিক হোটেলের সন্ধান করতে থাকে। পরে নিশ্চিত হয় শহরের চারমাথা এলাকায় খাজা হাইওয়ে মোটেল নামে আবাসিক হোটেল আছেন। রবিবার সকালে পুলিশের একটি দল ওই হোটেলে গিয়ে দেখেন রেজিস্টারে মাসুম মোহাম্মদ আকাশ নামে কোনও ব্যক্তির নাম নেই। এরপর পুলিশ হোটেলের সবগুলো কক্ষ তল্লাশি শুরু করে।
একপর্যায়ে দোতলার ১০১ নম্বর কক্ষে নক করলে ভেতর থেকে কোনও সাড়া আসে না। সন্দেহ হলে পুলিশ দরজা ভেঙে ফেলার প্রস্তুতি নেয়। এর কিছুক্ষণ পর খালি গায়ে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরা এক যুবক দরজা খুলে দেন। কাছে থাকা ছবির সঙ্গে চেহারার মিল পাওয়া গেলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক নিজের নাম গোপন করেন। পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে ঢাকায় জোড়া খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তবে কলেজছাত্রী প্রীতি হত্যার বিষয়টি ফেসবুকে ও টেলিভিশনের খবরে জেনেছেন বলে দাবি করেন।
পুলিশের কাছে মাসুম জানান, তিনি নিজে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ১২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন। এরপর অস্ত্র ঢাকায় লুকিয়ে রাখেন এবং মোবাইল ফোন ভেঙে হাতিরঝিলে ফেলে দেন। ঢাকা থেকে পালিয়ে ২৫ মার্চ রাত ১২টার দিকে খাজা হাইওয়ে নামে আবাসিক ওঠেন। এখান থেকে দিনাজপুরের হিলি বা জয়পুরহাটের কোনও সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
বগুড়া শহরের চারমাথা খাজা হাইওয়ে হোটেলের ব্যবস্থাপক আইয়ুব আলী পুলিশকে জানান, রাজন নামে একজন তাদের হোটেলে মাঝে মাঝে আসেন। রাজন দোতলায় ১১১ নম্বর কক্ষে ওঠেন। এক বন্ধু আসবেন বলে ৪০০ টাকায় ১০১ নম্বর কক্ষ ভাড়া নেন। ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই যুবক (মাসুম) প্রাইভেটকারে হোটেলে আসেন। এ সময় গাড়িতে আরও দুই জন ছিলেন। তারা মাসুমকে নামিয়ে দিয়ে চলে যান। রবিবার সকাল ৭টার দিকে রাজন রাজশাহী যাওয়ার নামে হোটেল ত্যাগ করেন।
সদর ফাঁড়ির এসআই খোরশেদ আলম রবি জানান, মাসুম ২৫ মার্চ রাতে বগুড়ার চারমাথার ওই হোটেলে উঠেন। ঢাকা ডিবি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ফোন পেয়ে তিনি ২৭ মার্চ সকালে মাসুমকে হোটেল থেকে গ্রেফতার করেন। ওই দিন বিকালে কর্মকর্তারা তাকে ঢাকায় নিয়ে যান। গ্রেফতারের সময় কক্ষ তল্লাশি করে ট্রাভেল ব্যাগে কিছু কাপড় ও তিনটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এর দুইটি ছিল অব্যবহৃত। এ ছাড়া মাসুমের কাছে বেশি টাকাও ছিল না।
সদর থানার ওসি সেলিম রেজা জানান, ঢাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের দেওয়া তথ্যে তারা মাসুমকে গ্রেফতার করেন। পরে ঢাকার কর্মকর্তারা মাসুমকে নিয়ে যান। ওই দিন সকাল ৯টায় তার হোটেল ছাড়ার কথা ছিল। একটু দেরি হলে তিনি হিলি বা জয়পুরহাটের কোনও সীমান্ত পথে ভারতে পালিয়ে যেতেন।
বৃহস্পতিবার রাতে শাহজাহানপুর এলাকায় প্রাইভেটকারে থাকা মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার উদ্দেশে এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যান মাসুম। এ সময় পাশে রিকশায় থাকা সামিয়া আফনান প্রীতিও গুলিবিদ্ধ হন। পরে দুই জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার মাসুমের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।