আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছর ধরে নিজ নির্বাচনি এলাকা রাঙ্গুনিয়ায় দখল-বেদখলে মেতে ছিল সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ তার ভাইয়েরা। শুধু নিজ বাড়ির পাশে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নজুড়ে বন বিভাগের ২১২ একর জমি দখল করে গড়ে তুলেছিলেন রেস্টুরেন্ট, মাছের খামার, গরু ও গয়ালের খামার, রিসোর্ট, মাল্টাবাগানসহ বাংলোবাড়ি। অবৈধভাবে জমি দখলের কারণে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বন বিভাগ।
এদিকে, বুধবার (২৮ আগস্ট) রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের দুধপুকুরিয়া এলাকায় কুরুশিয়া রেঞ্জ বন বিভাগের আওতাধীন ৩০ একর জমি দখলমুক্ত করেছে বন বিভাগ। এসব জমি হাছান মাহমুদের ভাই এরশাদ মাহমুদ দখলে রেখেছিলেন। এসব জমিতে মাছের প্রজেক্ট এবং মাল্টাবাগান ছিল। তবে জমিগুলো ছিল বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আওতাধীন। বনাঞ্চলের গাছ কেটে গড়ে তোলা হয়েছে মাছের প্রজেক্টসহ মাল্টাবাগান। সব মিলিয়ে বন বিভাগের কয়েকশ কোটি টাকার বনভূমি দখলে ছিল হাছান মাহমুদের পরিবারের কাছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোরশেদ হোসেন বুধবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আগে জানতাম এসব জমি বন বিভাগ থেকে হাছান মাহমুদ এবং তার ভাই এরশাদ মাহমুদ কিনে নিয়েছেন। এলাকায়ও এভাবে প্রচার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর জানছি তারা কেনেননি, জোরপূর্বক দখল করেছেন। গত ১৫ বছর পর আজ বন বিভাগ হাছান মাহমুদের পরিবার থেকে কিছু জমি দখলমুক্ত করেছে।’
রাঙ্গুনিয়া কুরুশিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার রেঞ্জের আওতাধীন ৯ হাজার একর বনাঞ্চল রয়েছে। এর মধ্যে ২১২ একর বনাঞ্চল হাছান মাহমুদের ভাইদের দখলে রয়েছে। প্রায় ৮ থেকে ১০টি স্থানে তারা বন বিভাগের জমি জোরপূর্বক দখল করে রেস্টুরেন্ট, মাছের খামার, গরু ও গয়ালের খামার, রিসোর্ট, মাল্টাবাগানসহ বাংলোবাড়ি গড়ে তুলেছিলেন। এসব জমি দখলে তারা বিগত সরকারের প্রভাব খাটিয়েছেন। তাদের যেখানে ইচ্ছে হয়েছে সেখানেই বন বিভাগের জমি জোরপূর্বক দখল করে স্থাপনা গড়েছেন।’
বন বিভাগের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা হাছান মাহমুদের পরিবারের কাছে দখলে থাকা জমি উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। গত ২৬ আগস্ট থেকে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রথম দিন পদুয়া এলাকায় গড়ে তোলা বন্যপ্রাণী গয়ালের খামার, গরুর খামার, মাছ চাষের পুকুর দখলমুক্ত করা হয়েছে। ওই দিন সব মিলিয়ে ৫৫ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়। দ্বিতীয় দিন ২৭ আগস্ট পদুয়া এলাকায় সড়কের পাশে বন বিভাগের জমি দখল করে গড়ে তোলা রিসোর্ট, রেস্টুরেন্টে, বাংলোবাড়ি এবং মাছ চাষের পুকুর উচ্ছেদ করা হয়। ওই দিন ১৫ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়। সব মিলিয়ে গত তিন দিনে ১০৫ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। বাকি জমিতে আমরা পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবো।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মারুফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের ভাই এরশাদ মাহমুদ এখানে প্রায় ২১২ একর বন বিভাগের জমি দখল করেছিলেন। এসব জমিতে নানা স্থাপনা নির্মাণ করেন। আমরা তার দখলে থাকা জমি উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেছি। গত তিন দিনে চারটি স্থানে অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ১০৫ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। অবৈধভাবে বন বিভাগের জমি দখলে রাখার কারণে দখলকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে।’
তিনি বলেন, ‘উদ্ধার হওয়া এসব জমিতে বন বিভাগের উদ্যোগে বনায়ন করা হবে। একসময় এখানে বনায়ন ছিল। সেগুলো কেটে তারা নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন।’
স্থানীয় লোকজন জানান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের পরিবারের সদস্যরা শুধু বন বিভাগের জমি দখল করেছে তা নয়, রাঙ্গুনিয়া উপজেলাজুড়ে বালুমহাল নিয়ন্ত্রণও ছিল তাদের হাতে। কর্ণফুলী নদী, শিলক খাল, ইছামতী খালসহ বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হতো। এ পরিবারের সদস্যদের রাঙ্গুনিয়া ছাড়াও চট্টগ্রাম শহরেও বিপুল সম্পত্তি ও ভবন রয়েছে। যার সবই গড়ে উঠেছে গত ১৫ বছরে।