হাত বদলেই কেজিপ্রতি সবজির দাম বাড়ছে ২০-৪০ টাকা
বাংলাদেশ

হাত বদলেই কেজিপ্রতি সবজির দাম বাড়ছে ২০-৪০ টাকা

সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও টালমাটাল সবজির বাজার। কমছে না চাল, ডাল ও মাছ-মাংসের দাম। খাদ্যপণ্যের সংকট না থাকলেও অব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাবে সবজির দাম বাড়ছে। বিক্রেতা ও মজুতদারের উচ্চলাভের আকাঙ্ক্ষায় বিপাকে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার।

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) নগরীর সাহেব বাজার, কোর্ট বাজার, শিরোইল, উপশহর নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বন্যার অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক চড়া। যদিও গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে। তবে উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে স্থানীয় বাজারেই সবজির দাম কেজিপ্রতি বাড়ছে ২০-৪০ টাকা।

বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে, এখনও সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। তবে সামনের দিনগুলোতে বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ যত বাড়বে দাম ততই কমবে। গত সপ্তাহের চেয়ে প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে। সামনে আরও কমবে। আর চাষি থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত কেজিপ্রতি দাম বৃদ্ধির পেছনে যাতায়াত ভাড়াসহ অন্য খরচ থাকে।

বাজারে প্রতিকেজি ফুলকপি বিক্রি হতে দেখা গেছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজি পর্যন্ত। কিন্তু এই ফুলকপি চাষিরা বিক্রি করছেন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পবা উপজেলার এক ফুলকপি চাষি বলেন, গত সপ্তাহে কপি ৭৫ টাকা কেজি দরে আড়তে বিক্রি করে এসেছিলাম। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমে শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়েছে। কিন্তু খুচরায় শুনতে পাচ্ছি ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এই চাষি মনে করেন, কার্যকর নজরদারি থাকলে তারাও ভালো দাম পাবেন। ক্রেতারাও ঠকবেন না।

এদিকে শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) কাকরোল, মুলা, ঝিঙ্গা, চিচিংগা, শসা বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। বেগুন বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি, ঢ্যাঁড়স ও করলা ১২০ টাকা কেজি, লাউ ৬০-৭০ টাকা পিস, আলু ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি। এ ছাড়া কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৩২০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে বাজারে প্রতি কেজি ৩৬০ টাকা থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে কাঁচামরিচ। এ ছাড়া পেঁয়াজ জাত ভেদে ৯০ থেকে ১১০ টাকা, আদা ২৮০ ও রসুন ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

হাত বদলেই কেজিপ্রতি সবজির দাম বাড়ছে ২০-৪০ টাকা

রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজারের সবজি ব্যবসায়ী লিটন আলী বলেন, সবজির দাম গত কয়েক দিন থেকেই কমছে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত শীতকালীন সবজি বাজারে আসবে। তখন দাম অনেক কমে যাবে। আর সরকারের নজরদারির প্রয়োজন আছে। নজরদারি না থাকলে অতি মুনাফালোভীরা সুযোগ নেয়।

এদিকে, মুরগির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে মুরগির মাংস ও ডিম। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০, দেশি মুরগি ৪৭০, সোনালি মুরগি ২৭০ ও পাতিহাঁস ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর ডিমের মধ্যে প্রতি হালি ফার্মের সাদা ডিম ৪৮, লাল ডিম ৫২, হাঁসের ডিম ৭০ ও দেশি মুরগির ডিম ৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মাছের বাজারেও স্বস্তি নেই। প্রতি কেজি পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০, রুই মাছ ৩০০, সিলভার কার্প ২২০ থেকে ২৫০, মৃগেল ২৫০, কাতল ৩৫০, তেলাপিয়া ২০০, পাবদা ৫০০, দেশি কৈ ৬০০, বোয়াল ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল, ডাল ও তেল।

এদিকে, ক্রেতারা বাজারে গিয়ে নাভিশ্বাস ছাড়ছেন। কণ্ঠে ফুটে উঠছে ক্ষোভ। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে প্রতিটা ক্ষেত্রে অসাধু সিন্ডিকেট কাজ করছে। কিন্তু সরকার এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না। এ কারণে বাজারে এসে দাম শুনে অবাক হতে হচ্ছে।

হাত বদলেই কেজিপ্রতি সবজির দাম বাড়ছে ২০-৪০ টাকা

রাজশাহী নগরীর বাটার মোড় এলাকার গৃহিণী সেতেরা বেগম মাস্টারপাড়ার বাজারে এসেছেন সবজি কিনতে। তিনি বলেন, বাজারে এখন ৫০ টাকার নিচে কোনও সবজি মিলছে না। কয়েক বছর আগে ৩০০ টাকায় ব্যাগ ভর্তি হলেও এখন হাজার টাকাতেও হচ্ছে না। প্রত্যেকটা পণ্যের মূল্য কয়েকগুণ বাড়ছে। দাম কমার তো কোনও সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। নিয়মিত বাজার তদারকি করে যেন দামটা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা হয়।

সবজির বাজারে আসা আব্দুল আলীম বলেন, আমি শহরে থাকি। কিন্তু আমার বাবাও গ্রামে সবজি আবাদ করেন। এত শ্রম ও কষ্ট করার পর বাবা যে দামে সবজি বিক্রি করে, বাজারে এসে দাম কখনও কখনও দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। এটা সম্পূর্ণ নজরদারির ব্যর্থতা। আর এই ব্যর্থতা আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের জীবনকে কষ্টের করে তুলছে।

সবজি বিক্রেতা জমসেদ আলী বলেন, শুক্রবার যে সবজি ৮০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে তা বুধবারে ৭০ টাকাতে পাওয়া গিয়েছিল। আবার আগামী পরশু দিন দামও আরও বাড়তে পারে। আমাদের এভাবেই কিনে নিয়ে এসে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমাদের লাভও থাকছে না।

 

হাত বদলেই কেজিপ্রতি সবজির দাম বাড়ছে ২০-৪০ টাকা

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক উম্মে সালমা বলেন, এবার বর্ষণের কারণে কিছু সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সেটা খুব বেশি না। আশা করছি, শীতকালীন সবজির আবাদটা বাজারে এলেই অস্বস্তি অনেকটাই কাটবে।

রাজশাহী নগরীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে টাস্কফোর্স কমিটি তদারকি শুরু করেছে। এই কমিটির নেতৃত্বদানকারী রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক যোবায়ের আহমেদ বলেন, আমরা পাইকারি বাজার ও আড়ত সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি, প্রতিটি ব্যবসায়ীকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। তারা যেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখে এবং সহনীয় লাভ করে। ব্যবসায়ীরা নিয়ম মেনে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, আমরা নিয়মিত বাজার তদারকি করবো।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, আমরা প্রায় বাজার মনিটরিং করছি। সরকার টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে দিয়েছে। সব ব্যবসায়ীদের সতর্ক করছি। ব্যবসায়ীরা কথা না শুনলে আরও কঠোর হবো।

Source link

Related posts

আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

News Desk

একাদশে ভর্তির আবেদন শুরু ৮ ডিসেম্বর

News Desk

আন্দোলন, সংগ্রাম, ঐতিহ্য ও সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ৭৩ বছর

News Desk

Leave a Comment