স্বামীর মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন ২৪ বছর বয়সী একলিমা বেগম। এরপর ১৯৮১ সালের কোনও একদিন হারিয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও স্বজনরা তার সন্ধান পাননি। ধরেই নিয়েছিলেন মারা গেছেন। তবে দীর্ঘ ৪১ বছর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালিতে তার খোঁজ মিলেছে।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল শেখের মেয়ে একলিমা বেগম। তার বয়স এখন ৬৫ বছর। তার খোঁজ পাওয়ায় স্বজনরা খুব খুশি। তবে তিনি পাকিস্তানে কীভাবে গেলেন সে বিষয়ে কেউই কিছু বলতে পারছেন না। একলিমার শুধু মনে আছে বাবা-মা-ভাই ও তালার গঙ্গারামপুর গ্রামের নামটি।
শিয়ালকোটের দিলওয়ালিতে পরিবারের সঙ্গে আছেন একলিমা। মৃত্যুর আগে অন্তত একবার নিজ মাতৃভূমিতে আসার ইচ্ছা পোষণ করেন। তার এ আকুতির কথা ভিডিও করে সন্তানরা ফেসবুকে যশোরের একটি গ্রুপে পোস্ট করেন। ভিডিওটি একলিমার বড় ভাই মৃত মকবুল শেখের ছেলে জাকিরায়া শেখের নজরে আসে। ভিডিওতে একলিমার বলা নামগুলো তার দাদা-বাবা ও চাচাদের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বাড়িতে আলোচনা করেন এবং ভিডিও দেখিয়ে নিশ্চিত হন ভিডিওর একলিমা বেগমই তার হারিয়ে যাওয়া ফুফু। এরপর পারিবারিকভাবে একলিমার সঙ্গে ভিডিও কলে যোগাযোগ করেন।
একলিমার ছোট ভাই ইব্রাহিম শেখ (৫০) বলেন, ‘তখন আমাদের অভাব ছিল। আপার স্বামী মারা গেলে সে প্রায় পাগল হয়ে যায়। পরে কীভাবে যে পাকিস্তানে চলে গেছে তা আমরা কেউই জানি না। সম্প্রতি তার খোঁজ পেয়েছি। আমরা চাই সে ফিরে আসুক।’
জাকিরায়া শেখ বলেন, ‘কিছু দিন আগে ফেসবুকের মাধ্যমে ফুফুর খোঁজ পাই। তারপর থেকে তার সঙ্গে বাড়ির সবার নিয়মিত কথা হচ্ছে। তিনি আমাদের এখানে আসতে চান। এজন্য তাদের কাছে ইনভাইটেশন লেটার পাঠানো হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ও পাকিস্তান অ্যাম্বাসি সহযোগিতা করলে তিনি আসতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফুফুর সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি তিনি পাকিস্তানের একটি শেল্টার হোমে ছিলেন। সেখানে মুহাম্মদ সিদ্দিক নামে একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে তারা বিয়ে করেন। মুহাম্মদ সিদ্দিক কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। সেখানে তাদের দুটি ছেলে ও দুটি মেয়ে রয়েছে। আমরা চাই তারা এখানে বেড়াতে আসার সুযোগ পাক। এজন্য সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছি।
বাংলাদেশে একলিমা বেগমের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। মেয়ে দুটির বিয়ে হয়েছে। ছেলে হেকমত আলী ঢাকার একটি কারখানায় কাজ করেন।
তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় আব্বাকে হারিয়েছি। উনার কবরটা এখনও আছে। মাকে এত বছর পরে পাইছি, তারে আপনারা ফিরিয়ে এনে দেন।’
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গতকাল বিষয়টি শোনার পর একলিমার বড় ভাই জাকির শেখের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বোনকে শনাক্ত করেছেন। একলিমার পাকিস্তানের স্বামীও মারা গেছে। তার ছেলেদের কথাবার্তার এক পর্যায়ে এই এলাকার নাম বলেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও সাহায্য লাগলে করা হবে।’