চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় গত ২৯ জুলাই ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন তানভির আহসান হৃদয় (১৯)। ঘটনার এক সপ্তাহ পরও বাসায় ফিরতে পারেননি। গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডের ৩৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শুক্রবার (৫ জুলাই) হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হৃদয়ের পাশে বসে আছেন মা লাকী আকতার। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে ভালো নেই। দুর্ঘটনার পর আমার ছেলে বেঁচে আছে ঠিকই, কিন্তু ভালোভাবে কথা বলতে পারছে না। আত্মীয়-স্বজনদের চিনতে পারছে না। দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পেয়েছে। এ কারণে তার স্মৃতিশক্তি কমে গেছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।’
লাকী আকতার আরও বলেন, ‘আমার এক ছেলে এক মেয়ে। বড় মেয়ে তানজু আকতারের বিয়ে হয়েছে। হৃদয় স্থানীয় একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। তার বাবা আবদুর রহিম পেশায় দিনমজুর। হৃদয়কে নিয়ে আমাদের অনেক আশা-স্বপ্ন আছে।’
আরও পড়ুন: ছুটির দিনে পিকনিক করতে গিয়েছিলেন নিহত ১১ জন
নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে হৃদয়ের পাশের সিটে চিকিৎসাধীন আছেন একই দুর্ঘটনায় আহত আরও দুই জন। তাদের মধ্যে ৩৮ নম্বর সিটে আছেন মাহাবুব হাসান মাহিন এবং ৪০ নম্বর সিটে আছেন তৌকির ইবনে শাওন। এছাড়া হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন তাসমির হাসান পাভেল। এই ঘটনায় আহত নাহিদুল আলম সৈকত চিকিৎসাধীন আছেন বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে।
মাহাবুব হাসানের শয্যার পাশে আছেন মা রোজি আকতারসহ কয়েকজন স্বজন। রোজি আকতার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর থেকে আমার ছেলে বিছানা থেকে উঠতে পারছে না। চিকিৎসকরা বলেছেন, দুর্ঘটনায় তার গলার পেছনে মেরুদণ্ডের ওপর আঘাত পেয়েছে। এ কারণে কোনও কথা বলতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর পর চিৎকার দিয়ে ওঠে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার এক ছেলে এক মেয়ে। মাহিন বড়। সে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। তাকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। দুর্ঘটনার পর অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তার এ অবস্থায় আমরা দুশ্চিন্তাই আছি।’
নিউরো সার্জারি বিভাগের ৪০ নম্বর সিটে চিকিৎসাধীন তৌকির ইবনে শাওন। তিনি দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসের হেলপার ছিলেন। দুর্ঘটনায় বাম হাত ও বাম পায়ে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। দুই হাত-পা ব্যান্ডেজ করা।
তার বাবা মো. সোলেমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার ছেলের অবস্থা ভালো না। সে বাম হাত-বাম পা একেবারেই নড়াচড়া করতে পারছে না। তার এ দুই হাত-পা বেশি আঘাত পেয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। আমার দুই মেয়ে তিন ছেলের মধ্যে শাওন দ্বিতীয়। তাকে নিয়ে আমাদের টেনশন হচ্ছে। দুর্ঘটনার এতদিন পরও তার অবস্থা ভালো হচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে আহত আরও একজনের মৃত্যু
হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন তাসমির হাসান পাভেল এস নজুমিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা। সে হাটহাজারীর চিকনদন্ডী ইউনিয়নের খৈয়াগ্রাম এলাকার মৃত মো. পারভেজের ছেলে।
একই দুর্ঘটনায় আহত নাহিদুল আলম সৈকত চিকিৎসাধীন আছেন বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে। সৈকত এস নজুমিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত লেগেছে। তার শারীরিক অবস্থাও ভালো নয় বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
এদিকে শুক্রবার (৫ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে হায়াতুল ইসলাম আয়াত (১৭)। সে হাটহাজারী থানার চকনদন্ডী ইউনিয়নের খন্দখিয়া গ্রামের মো. শুক্কুরের ছেলে।
আরও পড়ুন: মীরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত
চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মীরসরাইয়ে দুর্ঘটনায় আহত চারজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর মধ্যে পাভেল নামে একজন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা এখনও বলার মতো না। বাকিজ তিনজনের পুরোপুরি সুস্থ হতে সময় লাগবে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টারের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ১৬ জন শুক্রবার সকাল ৮টায় হাটহাজারীর আমান বাজার থেকে মাইক্রোবাসে খৈয়াছড়া ঝর্ণায় ঘুরতে যান। ফেরার পথে দুপুর পৌনে ২টার দিকে বারতাকিয়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস লাইনে উঠে পড়লে চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী ট্রেন ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জন নিহত হন। আহত হন আরও পাঁচ জন। তাদের মধ্যে আজ আরও একজন শুক্রবার মারা গেছে।