Image default
বাংলাদেশ

হিলিতে পানির অভাবে বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কা

দিনাজপুরের হিলিতে গভীর নলকূপ বসানোর অনুমোদন মিললেও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় পানি তুলতে পারছেন না কৃষকরা। এতে বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে তাদের।

হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ২৬০টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎচালিত অগভীর নলকূপ রয়েছে ৩১০টি, ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপ রয়েছে ৮২০টি। পাশাপাশি চলতি মৌসুমে ১৮টি বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরের ১৮টি নলকূপে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি।

হিলির সিংড়াপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জমিতে সার দিয়ে প্রস্তুত করে রেখেছি। পানি এলে চারা লাগাবো। কিন্তু এখন পর্যন্ত পানি না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছি। বিদ্যুৎ সংযোগ পেলে নলকূপ চালু করতে পারতাম। এতদিনে আমাদের বোরো ধান লাগানো শেষ হয়ে যেতো। এটি পল্লী বিদ্যুতের অবহেলা নাকি অন্য কিছু বুঝতে পারছি না। 

তিনিই বলেন, ইতোমধ্যে অনেক এলাকায় বোরো ধান লাগানো শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা পানির অভাবে এখনও চারা লাগাতে পারছি না। বোরো ধান সাধারণত আগে লাগালে ভালো ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু ফাগুন মাসে লাগালে তো তেমন ফলন পাবো না।
 
একই গ্রামের কৃষক নূরে আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা যে গভীর নলকূপ থেকে পানি নেবো সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ এখনও লাগেনি। সেটি চালু না হওয়ায় আমাদের বোরো আবাদে দেরি হচ্ছে। পানি পেলে এতদিনে বোরো আবাদ শুরু করে দিতে পারতাম। বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ, নলকূপে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। যাতে আমরা বোরো ধান লাগাতে পারি।

হিলির হরেকৃষ্টপুরের গভীর নলকূপ মালিক মোজাফফর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার ২০-৩০ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু হওয়ায় ওসব জমিতে অন্য নলকূপ থেকেও পানি আসতে পারে না। আমি রবিশস্য থেকে শুরু করে সব ধরনের শাকসবজি আবাদ করি। আগে শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি তুলে আবাদ করতে পারলেও এখন লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় সেটি আর সম্ভব হয় না। এজন্য ২০১৮ সালে নলকূপের লাইসেন্স গ্রহণ করলাম। এরপর বিদ্যুতের জন্য আবেদন করি। পরের বছর আবারও লাইসেন্স নবায়ন করেছি। এরপর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করি। তারা ছয়টি পোল লাগবে বলে জানায়। সেই সঙ্গে দুই লাখ ৮১ হাজার টাকা চায়। আমি গরিব মানুষ। এত টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারিনি। পরে বোরিং স্থানান্তরের জন্য আবেদন করি। গত মাসে আবেদন অনুমোদন পায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি। ফলে নলকূপ চালু করতে পারিনি। তারা কবে দেবে সংযোগ, কবে নলকূপ চালু করবো, কবে বোরো ধান রোপণ করবো কিছুই বুঝতেছি না। এদিকে ধান রোপণের সময় পার হয়ে যাচ্ছে।

হিলির আলিহাট ও বোয়ালদাড় ইউনিয়নের কয়েকজন নলকূপ মালিক নাম না প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা সব প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে নলকূপ বসানোর লাইসেন্স গ্রহণ করেছি। এরপর প্রক্রিয়া মোতাবেক পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদ করেছি। কিন্তু সংযোগ প্রদানের জন্য কর্তৃপক্ষের কোনও গুরুত্ব নেই। অনেকেই নলকূপ চালু করে পানি উত্তোলন করছেন। তাদের স্কিমের ধান রোপণ প্রায় শেষ। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় নলকূপ চালু করতে পারছি না। স্কিমের কৃষকরা বারবার চাপ দিচ্ছেন। তাদের বোরো ধান রোপণে দেরি হচ্ছে। কিন্তু আমরা বিদ্যুৎ অফিসে ঘুরেও কোনও কাজ হচ্ছে না। বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, মিটার নেই। যার কারণে সংযোগ দিতে পারছেন না। আমরা বিকল্প উপায়ে একক মিটার দিয়ে চালুর কথা বললেও তারা কথা শোনেননি। আবার লাইসেন্স পাওয়ার পর বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করলেও তা না নেওয়ার অভিযোগ করেন কেউ কেউ।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ হিলি অফিসের এজিএম আব্দুল মোতালেব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এতদিন আমাদের কাছে মিটার ছিল না। ইতোমধ্যে আমরা মিটারের অনুমোদন পেয়েছি। দুই-একদিনের মধ্যেই মিটার চলে আসবে। আমরা আগামীকাল অথবা পরশুর মধ্যে মিটার বসাতে পারবো। এরপর বিদ্যুৎ সংযোগ দিলেই পানির সমস্যা কেটে যাবে।

 

Source link

Related posts

চোরাইপথে আসছে ভারতীয় পেঁয়াজ!

News Desk

রাজধানীতে সরকারি ৫ করোনা হাসপাতালে আইসিইউ ফাঁকা নেই

News Desk

‘সরকার দক্ষিণে গেলে আপনাকেও দক্ষিণে যেতে হবে’

News Desk

Leave a Comment