হয়নি স্থায়ী বেড়িবাঁধ, আতঙ্কে উপকূলের মানুষ
বাংলাদেশ

হয়নি স্থায়ী বেড়িবাঁধ, আতঙ্কে উপকূলের মানুষ

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় অশনি ধেয়ে আসার খবরে দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন উপকূলের মানুষ। শেষ পর্যন্ত অশনি দুর্বল হয়ে পড়ায় বেড়িবাঁধ রক্ষা পায়। এর আগে ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে বিধস্ত হয় উপকূল। সে সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শেষ হয়নি এখনও। এ অবস্থায় যেকোনও সময় ঘূর্ণিঝড় হলে উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন উপকূলবাসী। তারা জানিয়েছেন, স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করা হলে দুর্ভোগ শেষ হবে না।  

দু বছর আগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে উপকূলের বাড়িঘর ভেঙে যায় এবং বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়। নোনা পানির কারণে ফসল নষ্ট হয়। আম্পানে কয়রা উপজেলায় পাউবোর ১২১ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ৩০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভেঙে যায় ২১টি স্থানে। এর মধ্যে স্থানীয় মানুষ ১৪টি স্থানে অস্থায়ীভাবে রিংবাঁধ দিয়ে নদীর পানি প্রবেশ বন্ধ করেন।

আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত কয়রা উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলোর মধ্যে রয়েছে– সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাট, মদিনাবাদ তফসিল অফিসের সামনে থেকে হামকুড়ার গোড়া, মহারাজপুর ইউনিয়নের সুতির অফিস ও দশালিয়া, দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়াপদা বাঁধ গাববুনিয়া, মাটিয়াভাঙ্গা (কোবাদক ফরেস্ট অফিস থেকে ঘড়িলাল বাজার) আংটিহারা (সুইচ গেট থেকে পুলিশ ফাঁড়ি), পাতাখালি (খাশিটানা বাঁধ থেকে জোড়শিং বাজার) উত্তর বেদকাশির গাতিরঘেরী।

কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী-তীরবর্তী অনেক এলাকায় এখনও টেকসই বেড়িবাঁধ হয়নি। সেসব গ্রামে বসবাসকারী পরিবারগুলোর মাঝে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। তাদের অধিকাংশেরই নেই দুর্যোগসহনীয় বাড়িঘর। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবার এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

জোড়শিং গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর গাজী জানান, ২০০৯ সালের ২৫ মে সুপার সাইক্লোন আইলায় তার ঘর ভেঙে নদীতে বিলীন হয়। এরপর নতুন করে ঘর বাঁধেন। সেটিও আম্পানের প্রভাবে নদীভাঙনে বিলীন হয়। এরপর কোনোমতে মাথাগোঁজার ঠাঁই করেছেন। এটুকুই তার শেষ ভরসা।

একই এলাকায় আছাদুল হক বলেন, ‘নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লেই রাস্তা ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করবে। জোড়শিং ট্যাকের মাথা পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা দরকার।’

উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘উপকূলের মানুষের জন্য জরুরি ভিত্তিতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করা দরকার। আম্পান জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি করেছিল। এখনও ঝুঁকির মুখে রয়েছে– দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙ্গা, কয়রা সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাট ও মদিনাবাদ তফসিল অফিসের সামনে থেকে হামকুড়ার গড়া, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া ও সুতির কোণা।’

কয়রা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবিলা করে বর্তমানে উপকূলের মানুষ কোনোমতে টিকে আছে।’

কয়রা-পাইকগাছার সংসদ সদস্য আলহাজ মো. আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘টেকসই বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করা সময়ের দাবি। সব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকছে।’

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (সেকশন-২) নির্বাহী প্রকৌশলী শামিম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, ‘আম্পানের পর থেকে কয়রা উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।’

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘরবাড়ি, মৎস্য ঘের ও ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনও ভূমিকা না থাকায় দুর্ভোগে পড়া মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করেন। এ অঞ্চলের জীবন-জীবিকা রক্ষায় সরকারিভাবে টেকসই বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন।’

কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর থেকে মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন। ক্ষতিগ্রস্ত দুই নম্বর কয়রা, হরিণখোলা, ঘাটাখালী, মহারাজপুরের লোপা, দশহালিয়া, হোগলা, উত্তর বেতকাশির রত্না, গাজীপাড়া পূর্ব পাশ, গাতির গেড়ি, দক্ষিণ বেতকাশি, গোলখালী, ছোট আংটিহারা, বড় আংটিহারা, চরা মোখা, জর্শির বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

 

 

 

Source link

Related posts

অনবরত ভাঙছে পদ্মার পাড়, প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেই

News Desk

ভবদহ জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে টিআরএম চালুর দাবি

News Desk

গাজীপুরে সিএনজি স্টেশনে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৩

News Desk

Leave a Comment