সাতটি জাহাজ নিয়ে কোনোমতে কার্যক্রম চালাচ্ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ বারবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। সর্বশেষ ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটিতে নোঙর করা অবস্থায় বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায় এমটি বাংলার জ্যোতি জাহাজে। সেটি আর কোনও কাজে আসবে না। সেইসঙ্গে এমটি বাংলার সৌরভও পরিবহনের কাজে আসছে না। দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় এবং আয়ুষ্কাল অনেক আগেই শেষ হওয়ায় এগুলো ভেঙে স্ক্র্যাপ করার চিন্তা করছেন বিএসসির কর্মকর্তারা। এর মধ্য দিয়ে বিএসসির জাহাজ এখন পাঁচটিতে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, ১৯৮৭ সালের মে মাসে বিএসসির বহরে যুক্ত হয় এমটি বাংলার সৌরভ ও এমটি বাংলার জ্যোতি। ডেনমার্কের তৈরি জাহাজ দুটির প্রত্যেকটিতে ১৪ হাজার ৫৪১ টন করে তেল ধারণক্ষমতা ছিল। সাধারণত সমুদ্রগামী জাহাজের লাইফটাইম ২৫ বছর পর্যন্ত ধরা হয়। তবে তেল পরিবহনে দুটি জাহাজের বিকল্প না থাকায় ৩৭ বছর ধরে সেবা দিয়েছে। শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করলেও গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আমদানি করা তেলের জাহাজ মাদার ভেসেল থেকে পতেঙ্গার গুপ্তখাল ডলফিন জেটিতে তেল পরিবহন করে আসছিল জাহাজ দুটি।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর বেলা পৌনে ১১টার দিকে বন্দরের ডলফিন জেটিতে এমটি বাংলার জ্যোতিতে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগে। এ ঘটনায় তিন জন মারা যান। পাঁচ দিনের মাথায় ৪ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে বন্দরের বহির্নোঙরে থাকা এমটি বাংলার সৌরভে আগুন লাগে। এতে জাহাজটিতে থাকা এক স্টুয়ার্ড সদস্য পানিতে ঝাঁপ দিয়ে মারা যান। বাংলার সৌরভ জাহাজে আগুন লাগাকে নাশকতা হিসেবে সন্দেহ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরপর দুটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে মন্ত্রণালয় থেকে একটি এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন থেকে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে এখনও প্রতিবেদন দেয়নি দুই কমিটি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আরও আগে এমটি বাংলার সৌরভ এবং এমটি বাংলার জ্যোতি জাহাজকে বহর থেকে বাদ দেওয়ার কথা ছিল। তবে মাদার ভেসেল থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারি জেটিতে তেল পরিবহনে বিকল্প লাইটার জাহাজ না থাকায় ত্রুটি সারিয়ে জাহাজ দুটি বারবার সচল রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর জাহাজ দুটি আর সাগরে ভাসবে না। বাংলার সৌরভে যেসব তেল আছে, তা খালাসের পর ফেইজ আউট করে বহর থেকে বাদ দেওয়া হবে। বাংলার জ্যোতিও আর না চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাহাজ দুটিকে ভেঙে স্ক্র্যাপ করা হতে পারে।’
বিএসসি ও বন্দর সূত্রে জানা গেছে, আমদানি করা তেল বহির্নোঙর থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারি জেটিতে খালাসে যাতে কোনও ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়, সেজন্য একটি বিদেশি জাহাজ ভাড়া করা হয়েছে। সেটির নাম এমটি গ্লোবাল ডিগনিটি। পানামার পতাকাবাহী জাহাজটিতে তেল ধার ক্ষমতা ৩০ হাজার টন। গত রবিবার এটি বহির্নোঙরে এসে পৌঁছেছে। তবে এখনও তেল পরিবহন শুরু করেনি জাহাজটি।
রবিবার চট্টগ্রামে আসেন নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বিএসসির কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে মতবিনিময় করেন। মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বাংলার সৌরভ জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের পর ইস্টার্ন রিফাইনারির তেল লাইটারিংয়ের জন্য বিএসসির এমডি তাৎক্ষণিক জাহাজ ভাড়া করেছেন। ঘটনা ঘটার আগেই এমডি বলেছিলেন, বাংলার সৌরভের শেষ ট্রিপ ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ঘটনা ঘটে গেছে। আমার ভয় ছিল, তেল বিস্ফোরণ হলে চ্যানেল বন্ধ হয়ে যেতো। নেভি, কোস্টগার্ড, বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্রুত আগুন নিভিয়েছে।’