১৪ বছর আগের কথা। তখন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মাছ বিক্রি করতেন মিনহাজ আলী (৫০)। এভাবে একদিন ভুল করে ভারতের মধ্যে ঢুকে পড়েন। এরপর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে আটক হন তিনি। বাড়িতে তখন তাঁর স্ত্রী, ছোট দুই ছেলে ও এক মেয়ে। এরপর ভারতে পাঁচ বছর কারাভোগ করেন মিনহাজ। পরে ২০১৩ সালে সরকারের সহায়তায় ঢাকায় ফিরে এলেও তত দিনে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তাই আর বাড়িতে ফেরা হয়নি তাঁর।
অবশেষে আজ শনিবার বাড়িতে ফিরে আসেন মিনহাজ। ১৪ বছর পর দেখা হয় ছেলেমেয়ে, ছেলেদের স্ত্রী ও মেয়ের জামাইয়ের সঙ্গে। খবর পেয়ে গ্রামের লোকজনও ভিড় করেন তাঁকে দেখতে। তবে দেখা হয়নি প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে। কী করে হবে! মিনহাজ আলী বিএসএফের হাতে আটক হওয়ার দুই বছর পর ২০১০ সালে মারা যান তাঁর প্রথম স্ত্রী নার্গিস বেগম।
মিনহাজ আলী নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের চকতকিনগর গ্রামের নওশের ফকিরের ছেলে।
আজ মিনহাজ আলীর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে বসে কথা হয়। এ সময় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, লেখাপড়া জানেন না তিনি। ২০০৮ সালে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আলাইপুর এলাকায় মাছ বিক্রি করতে গিয়ে ভুলে ভারতের মধ্যে ঢুকে পড়েন। এরপর বিএসএফের হাতে ধরা পড়লে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরিবার থেকে কেউ খোঁজখবর না নেওয়ায় কারাগারে থাকতেই তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পাঁচ বছর কারাভোগ করে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে ছাড়া পান। এরপর ঢাকায় ফিরে আসেন। কিন্তু তত দিনে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন মিনহাজ। ভুলে যান বাড়ির কথা। এরপর ঢাকায় নির্মাণশ্রমিকের কাজ শুরু করেন। কিছু টাকাপয়সা জমানোর পর আবার বিয়ে করেন। সেই ঘরে আসে দুই ছেলে। সম্প্রতি গ্রামের এক পরিচিত লোকের সঙ্গে দেখা হয় মিনহাজের। এরপর একে একে তাঁর বাড়ির সব কথা মনে পড়ে। ওই লোকের মাধ্যমে জানতে পারেন তাঁর প্রথম স্ত্রী নার্গিস বেগম মারা গেছেন। তাঁদের আগের দুই ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তাঁরা আগের বাড়িতেই বাস করছেন। এরপর আজ দুপুরে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী ও সেই ঘরের দুই ছেলেকে সঙ্গে করে বাগাতিপাড়ায় নিজ বাড়িতে আসেন।
আজ বিকেলে মিনহাজ আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী, আগের স্ত্রীর মেয়ে ও মেয়ের জামাই, দুই ছেলে ও তাঁদের দুই স্ত্রী এবং বর্তমান স্ত্রীর ঘরের দুই ছেলে মিলে গল্প করছেন। আগের ঘরের সন্তানেরা তাঁকে পেয়ে খুব খুশি।
বড় ছেলে শান্ত আলী বলেন, ‘আমার বয়স যখন আট বছর তখন বাবা হারিয়ে যান। মা তাঁকে খুঁজে পেতে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। আমরা অনেক খুঁজেও বাবার খোঁজ পাইনি। বাবা হারিয়ে যাওয়ার দুই বছরের মাথায় মা মারা যান। পরে আমরা ধরেই নিয়েছি, বাবা মারা গেছেন। এখন হঠাৎ করে বাবাকে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। আগের মতো আমরা আবার একসঙ্গে থাকতে চাই।’
প্রতিবেশী আবদুল মালেক বলেন, ‘মিনহাজ যে বেঁচে আছে এবং সে বাড়িতে ফিরে আসবে, তা স্বপ্নেও ভাবিনি। বিদেশে থাকলেও তো ফোনে পরিবারের সঙ্গে কথাবার্তা হয়। মিনহাজের সঙ্গে কারও কোনো যোগাযোগই হয়নি এত দিন। শুনেছি ওর মাথায় সমস্যা হয়েছিল। হয়তো সে কারণে সে বাড়ির সবার কথা ভুলে গিয়েছিল। এখন সে বাড়িতে ফিরে আসায় আমরা গ্রামবাসীও খুশি।’
তথ্য সূত্র : https://www.prothomalo.com/