চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন আজ (শনিবার)। এ উপলক্ষে নগরের লালখান বাজার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার (১৮ জুন) রাতে সরেজমিনে সম্মেলনস্থলে নেতাকর্মীদের বেশ প্রাণোচ্ছল দেখা গেছে।তাদের কেউ কাজ করছেন মঞ্চ তৈরিতে, কেউ ব্যস্ত সাজসজ্জা নিয়ে, আবার কেউবা ব্যস্ত অতিথিদের আপ্যায়ন নিয়ে। কেউ কেউ দলবেঁধে করছেন গান। নেতাকর্মীদের অনেকেই দলে দলে অনুষ্ঠানস্থলে আসছেন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি দেখতে। সবমিলিয়ে ঘড়ির কাঁটায় ঘণ্টা ধরে প্রহর গুনছেন সম্মেলন নিয়ে নেতাকর্মীরা।
আবার একই সময়ে পদপ্রত্যাশীরা ঘুরছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে। যে যার যার মতো তদবিরে ব্যস্ত আছেন তারা। ইতোমধ্যে ৪৩৫ জন পদপ্রত্যাশী তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ বড়ো দুটি ভাগে বিভক্ত। তাদের মধ্যে এক গ্রুপের নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আজম নাছির উদ্দিন। অন্যটির নেতৃত্ব দেন প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তাদের এই গ্রুপিংয়ের প্রভাব পড়েছে নগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনেও।
সূত্র আরও জানায়, সম্মেলনসহ যাবতীয় বিষয় তদারকি করতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একটি টিম চট্টগ্রামে অবস্থান করছে। তারাসহ স্থানীয় নেতাদের মধ্যে হিসাব-নিকাশ চলছে পদের বিষয়টি নিয়ে। যদি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয় তবে সম্মেলনের দিন বা তার পরের দিন কমিটি প্রদান করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) নাফিউল করিম নাফা জাগো নিউজকে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সবার সঙ্গে আলোচনা করে কমিটি দেবেন। এ জন্য স্থানীয় সবার সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। যদি স্থানীয়ভাবে বিষয়টির সুরাহা না হয় তবে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়াতে পারে।
সম্মেলন ঘিরে যত প্রস্তুতি
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের ধারণক্ষমতা ১২০০ জনের। করোনায় স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে সেখানে আসন করা হয়েছে ৫০০ জনের মতো। এছাড়া অতিথি ও সাংবাদিকদের জন্য কিছু অতিরিক্ত আসন করা হবে। প্রতিটি চেয়ারে তিনফুট করে দূরত্ব থাকবে। প্রবেশপথ করা হয়েছে একটি। সম্মেলনে প্রথমে ৩০০ করে ৬০০ জন উপস্থিতির পরিকল্পনা থাকলেও, শেষ মুহূর্তে করোনার কারণে ২৫০ করে ৫০০ জন উপস্থিতির পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।অনুষ্ঠানস্থলে তৈরি করা হয়েছে সুবিশাল একটি মঞ্চ। মঞ্চে আসন করা হয়েছে ১৮টি। সামাজিক দূরত্ব মেনেই বসানো হয়েছে এসব আসন। আবার অনুষ্ঠানে আগত ডেলিকেট, কাউন্সিলর ও অতিথিদের দুপুরে আপ্যায়নের জন্য তৈরি করা হচ্ছে এক হাজার ১০০টি প্যাকেট। পুরো সম্মেলনে নিরাপত্তার জন্য উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও একাধিক স্বেচ্ছাসেবক টিম। জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে উপস্থিত থাকবেন ১১ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল টিম। এবারের সম্মেলনের পুরো ব্যয় বহন করবেন উপকমিটিতে থাকা নেতারা। সম্মেলনের জন্য বাজেট করা হয়েছে ১৩-১৫ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ টাকা কালেকশন হয়ে গেছে। বাকি টাকা সম্মেলনের আগেই তোলে খরচ করা হবে।
অনুষ্ঠানসূচি
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এইচএম জিয়াউদ্দিন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত হবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনলাইনে আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বাবু নির্মল রঞ্জন গুহ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে যুক্ত হবেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান।
এছাড়া অনলাইনে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে – আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আরেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, কর্ম ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াশিকা আয়শা খান, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ও চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখবেন- আবদুর রাজ্জাক, ইঞ্জিনিয়ার ফারুক আমজাদ খান, ড. জমির সিকদার, সৈয়দ নুরুল ইসলাম, একেএম নাজিম, নাফিউল করিম নাফা, আশিষ কুমার সিংহ, বাবু রাহুল বড়ুয়া, ডা. উম্মে সালমা মুনমুন, তারেক মাহমুদ চৌধুরী পান্থ, মো. আজগর আলী, জাবেদুল আযম মাসুম, বোখারী আযম, মো. হানিফ চৌধুরী ও মো. সাইফুল্লাহ আনসারী।
পুরো সম্মেলন সঞ্চালনা করবেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কেবিএম শাহজাহান ও সালাউদ্দিন আহমেদ। সম্মেলন দুটি অধিবেশনে হবে। প্রথম অধিবেশনে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখবেন। দ্বিতীয় অধিবেশনে কমিটি গঠন সংক্রান্ত কার্যাবলী পরিচালনা করা হবে।
প্রাথমিকভাবে ঘোষণা করা হবে কয়েক সদস্যবিশিষ্ট কমিটি
জানা গেছে, সম্মেলনের দিন বা পরের দিন কেন্দ্র থেকে এবারের কমিটি ঘোষণা হতে পারে। প্রাথমিকভাবে কয়েক সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হবে। এরপর আস্তে-ধীরে সংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।
এবারের কমিটি ঘিরে আলোচনায় আছেন- লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল, কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হেলাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট তসলিম উদ্দিন, দেবাশীষ দেবু, সুজিত দাশ, আজাদ খান অভি, আজিজুর রহমান আজিজ, আবদুর রশিদ লোকমান, মনোয়ার জাহান মনি, মো. জসিম উদ্দিন, সালাউদ্দিন ও সাদেক হোসেন পাপ্পু প্রমুখ।
এর আগে ২০০১ সালে অ্যাডভোকেট এইচএম জিয়াউদ্দীনকে আহ্বায়ক ও কেবিএম শাহজাহান ও সালাউদ্দিন আহমদকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় ২০ বছর। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসেছে তিনবারের মতো। কিন্তু ২১ সদস্যের এই কমিটি আর পূর্ণাঙ্গ হয়নি। অধীনস্থ থানা কিংবা ওয়ার্ডেও দেয়া হয়নি কোনো কমিটি। ফলে নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে পদবিহীন কাজ করেছেন নীরবে-নিভৃতে। যদিও সম্মেলনের জন্য চলতি বছর ১১ এপ্রিল ও ২৯ মে দুটি তারিখ নির্ধারণ করেও করোনার জন্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. নুরুল কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে পদ-পদবীবিহীন রাজনীতি করছেন। তারা দলের জন্য শুধু দিয়েছেন। দীর্ঘদিন পর এবার সম্মেলন হচ্ছে। এর মাধ্যমে দলের ত্যাগী নেতাদের প্রতিদান দেয়ার সুযোগ এসেছে। পাশাপাশি কমিটিতে নতুন নেতৃত্বও তোলে আনা উচিত। দীর্ঘদিন পরে হলেও সম্মেলন হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ উৎসব বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এইচএম জিয়াউদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে সম্মেলন শেষ করায় আমাদের লক্ষ্য। এবারে আমি স্বেচ্ছায় দলের পদে থাকছি না। আশা করছি, সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতারা দলের কাউন্সিলরদের পরামর্শ মোতাবেক যোগ্য নেতৃত্ব উপহার দেবেন।