চট্টগ্রাম বন্দরে মামলার কারণে বছরের পর বছর পড়ে আছে ১৯৫টি গাড়ি। এসব গাড়ির মধ্যে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, পাজেরো, পিকআপ ও ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি রয়েছে। এসব গাড়ির মধ্যে ২০০২ ও ২০০৩ সালের গাড়িও রয়েছে। গাড়িগুলো পড়ে আছে বন্দরের ইয়ার্ডে। কবে নাগাদ এসব মামলা নিষ্পত্তি করে গাড়িগুলো খালাস, নিলাম কিংবা ধ্বংস করা হবে তা নিয়ে স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তারা।
গত ২৪ ডিসেম্বর নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন চট্টগ্রাম কাস্টমস পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি পুরনো গাড়ি ৩১ জানুয়ারির মধ্যে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশনার পরে নড়েচড়ে বসে বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তারা। ওই নির্দেশনার পর বন্দরের ইয়ার্ডে কতটি পুরনো গাড়ি পড়ে আছে তার ইনভেন্টরি (তালিকা প্রণয়ন) করা হয়।
এসব গাড়ির ডকুমেন্ট পরীক্ষা শেষে সম্প্রতি জানা গেছে, বন্দরের ইয়ার্ডে পড়ে থাকা গাড়িগুলোর মধ্যে ১৯৫টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলায় আটকে থাকা গাড়িগুলোর মধ্যে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, পাজেরো, পিকআপ ও ট্রাক রয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের মুখপাত্র ও উপকমিশনার সাইদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাস্টমস আইন অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়ি আসার ৩০ দিনের মধ্যে ডেলিভারি নেওয়া না হলে নিলামে বিক্রি করা যাবে। বন্দর শেডে দীর্ঘ বছরের পর বছর পড়ে থাকা ১৯৫টি গাড়ি মামলার কারণে নিলামে তোলা যাচ্ছে না। এসব গাড়ির মধ্যে ২০০২ সাল থেকে মামলার কারণে অনেক গাড়ি পড়ে আছে। এসব গাড়ির অনেকগুলোর আয়ুকালও শেষ হয়ে গেছে। যে কারণে বেশি পুরনো গাড়িগুলো নিলামে নয়, স্ক্র্যাপ করে বিক্রি করতে হবে। ১৯৫টি গাড়ির মামলা নিষ্পত্তিতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা সাবেক সংসদ সদস্যদের ২৪টি গাড়িসহ মোট ৪৪টি গাড়ি সম্প্রতি নিলামে তোলা হয়। এর মধ্যে এমপিদের গাড়িতে যথাযথ দাম না পাওয়ার কারণে নিলামে বিক্রি হচ্ছে না। এসব গাড়ি দ্বিতীয় দফায় বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হবে। নিলামে তোলা বাকি ২০টি গাড়ির মধ্যে ১৯টি গাড়ির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেছে আমদানিকারকরা। এ কারণে একটি গাড়ি যথাযথ দরদাতার অনুকূলে নিলামে বিক্রি করা হতে পারে। বাকি ১৯টি গাড়ির বিরুদ্ধে দায়ের করা রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনও প্রকার সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।’
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি সাবেক সংসদ সদস্যদের আরও ছয়টি গাড়ি নিলামের উপযুক্ত হয়েছে। এসব গাড়িসহ আগের ২৪টি গাড়ি খুব শিগগিরই পুনরায় নিলামে তোলা হবে। এর বাইরে আরও ৩০টির মতো বিভিন্ন মডেলের গাড়ি আছে যেগুলো নিলামের উপযুক্ত হয়েছে। সেগুলোও শিগগিরই নিলামে তোলা হবে। আগে থেকে মামলার কারণে বন্দর শেডে পড়ে আছে ১৯৫টি গাড়ি। এসব গাড়ি অনেক জায়গা দখল করে আছে। এসব গাড়ির মামলা নিষ্পত্তিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমদানি করা গাড়ি ৩০ দিনের মধ্যে বন্দর থেকে ছাড় না নিলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। অনেক সময় কাস্টমস নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করলে আমদানিকারকরা এসব গাড়ি ছাড় নিতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত এ ক্ষেত্রে এসব গাড়ি ছাড় নিতে আমদানিকারকদের সময় বেঁধে দেন। যদি আমদানিকারকরা উক্ত সময়ের মধ্যে ছাড় নিতে না পারেন তাহলে আদালতে আবেদনের মাধ্যমে পুনরায় সময় বাড়িয়ে নেন। ওই সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় শুল্ককর পরিশোধ করে গাড়ি ছাড় করিয়ে নিতে পারেন আমদানিকারকরা।’