মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে গত দুই বছর বন্ধ ছিল পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সবচেয়ে বড় সামাজিক অনুষ্ঠান ‘বৈসাবি উৎসব’। তবে এবার নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে নানা আনুষ্ঠানিকতায় এই উৎসব শুরু হয়েছে। আবারও বৈসাবি উৎসবে মেতেছে পাহাড়ের মানুষ।
বিজু, বৈসুক, সাংগ্রাই, বিহু ও বিষু—নানান নামে আয়োজিত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর উৎসবকে একত্রে ‘বৈসাবি উৎসব’ হিসেবে পার্বত্যাঞ্চলে পালন করা হয়। মূলত চৈত্রের শেষ দিন ও নববর্ষ বরণ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন হলেও, পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানের রেশ থেকে যায়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বৃহত্তম এই সামাজিক আয়োজনে এখন ব্যস্ত শহর, নগর আর পাহাড়ি পল্লীগুলো। চারিদিকে আনন্দের সুর লহরী আর রঙিন সাজ।
২৯ চৈত্র চাকমা জনগোষ্ঠীর ‘ফুল বিজু’, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ‘হাঁড়িবসু’ আর মারমা সম্প্রদায়ের ‘সূচিকাজ’। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে আলোচনা সভা, মেলা ও ডিসপ্লে প্রদর্শন চলছে, যা চলবে আগামী ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী মেলা। মেলায় স্থানীয় নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী খাবার, পোশাকসহ বিভিন্ন সামগ্রী প্রদর্শন করা হচ্ছে। বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু মেলায় পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দল নিজ নিজ ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে।
এছাড়া চার দিনব্যাপী এই মেলায় রয়েছে শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন খেলাধুলার প্রতিযোগিতা, নাটক মঞ্চায়ন, পাঁচন রান্না, কবিতা পাঠসহ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ। ৪ এপ্রিল শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সকলের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, এ উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ি-বাঙালিসহ সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সম্প্রীতির মিলন মেলায় পরিণত হবে। উৎসবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্য পোশাক, খাবার ইত্যাদি ঐতিহ্যগুলো রক্ষা করতে হবে।
রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, এই উৎসব সকল সম্প্রসাদয়ের মধ্যে যেমন সম্প্রতি ধীর করবে, তেমন সুখী সমৃদ্ধ দেশ গঠনে সহায়তা করবে। এটি সকল সম্প্রদায়ের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২টি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলা বর্ষকে বিদায় জানানোর এই অনুষ্ঠান তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব হিসেবে বিবেচিত। এই উৎসব চাকমা জনগোষ্ঠী বিজু নামে, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী মানুষ সাংগ্রাই, মারমা জনগোষ্ঠী মানুষ বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী বিষু, কোনও কোনও জনগোষ্ঠী বিহু নামে পালন করে থাকে।
বৈসুকের ‘বৈ’ সাংগ্রাইয়ের ‘সা’ ও বিজু, বিষু ও বিহুর ‘বি’ নিয়ে উৎসবটিকে সংক্ষেপে ‘বৈসাবি’ নামে পালন করা হয়। পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদনের পর থেকে পাহাড়ের সকল জনগোষ্ঠীকে সম্মিলিতভাবে উৎসবে এক করতে এই সংক্ষেপে নামটি প্রচলন করা হয়েছে।