এ বছরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ উপহার পাবে দেশের ৩৬ লাখ ২৫ হাজার দরিদ্র পরিবার। গত বছর এই পরিবারগুলো দুই হাজার ৫০০ টাকা করে পেয়েছিল, এবারও ঈদের আগে তারা একই পরিমাণ অর্থ পাবেন। এ ছাড়া তালিকার বাইরে থাকা দরিদ্রদের নগদ সহায়তা দিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি চলমান লকডাউনে এক কোটি ২৫ লাখ পরিবারকে আগামী সপ্তাহের শুরু থেকে খাদ্য সহায়তা দেয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
তালিকাভুক্ত দরিদ্র পরিবারগুলোকে ঈদ উপহার হিসেবে নগদ সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) মাধ্যমে ঈদুল ফিতরের আগেই টাকা পাঠানো হবে। এতে সরকারের ব্যয় হবে ৮১১ কোটি টাকা। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত বছরের সাধারণ ছুটিতে ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে সহায়তা পাওয়ার উপযুক্ত নয় বিবেচনায় প্রায় ১৪ লাখ পরিবারকে সহায়তা করা হয়নি। পাশাপাশি পিন কার্যকর না থাকায় চার লাখের বেশি পরিবার উপহারের টাকা তুলতে পারেনি।
অর্থ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত বছর তালিকায় ত্রুটি থাকায় শেষ পর্যন্ত ৩৬ লাখ ২৫ হাজার ২৬৮ জনকে সহায়তা দেয়া হয়েছে। এবারও ঈদুল ফিতরের আগে এসব পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে বিকাশ, রকেট, নগদ ও শিওরক্যাশের মাধ্যমে ঈদের আগেই উপকারভোগীদের কাছে টাকা পাঠানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সহায়তা দরকার—এমন সব দরিদ্র, কর্মহীন এ তালিকায় নেই। চলমান দ্বিতীয় দফা লকডাউনে আরও অনেক দরিদ্র পরিবার হয়তো নতুন করে সংকটে পড়বে। এ ধরনের পরিবারের তালিকা করে তাদের সহায়তা করতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা জানান, প্রতিটি জেলা প্রশাসনের অনুকূলে বাজেটে থোক বরাদ্দ রয়েছে। সেই থোক বরাদ্দ থেকে নতুন করে তালিকাভুক্ত দরিদ্রদের সহায়তা দিতে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে আগের বছরের ৩৬ লাখের সঙ্গে নতুনদের তথ্যও সংরক্ষণ করবে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর চার লাখ ২ হাজার ১৩৬ জন তাদের অ্যাকাউন্টের পিন কার্যকর না থাকায় টাকা তুলতে পারেননি। তাদের কাছে পাঠানো অর্থের পরিমাণ ১০১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়কে লেখা এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য জানিয়েছে। ওই ১০১ কোটি ১৪ লাখ টাকা এমএফএস থেকে ফেরত নিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, যাদের অ্যাকাউন্টের পিন কার্যকর নেই, তারা যাতে পিন কার্যকর করে, সেজন্য মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের প্রচার চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সংস্থাগুলো তা ঠিকমতো করেনি। ফলে এই চার লাখ ২ হাজার ১৩৬ জন এবারও সহায়তা হাতে পাবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।