৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছর আগে আজিমপুর কবরস্থানের অবকাঠামো উন্নয়নকাজ শুরু হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের পর সময় বাড়িয়েও সে কাজ শেষ হয়নি। উল্টো নতুন করে ‘অ্যাডিশনাল টেন্ডার’ আহ্বান করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
ডিএসসিসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের কার্যাদেশ অনুযায়ী কবরস্থান সংস্কারে ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়া ও কাজের পরিধি বাড়ায় বরাদ্দের সব টাকা ব্যয় হয়েছে। এখন কবরস্থানের নিউমার্কেট রোড থেকে আজিমপুর রোড পর্যন্ত (উত্তর-দক্ষিণ) শেডসহ দ্বিতল হাঁটার পথ এবং উত্তর পাশে স্বচ্ছ কাচের প্রাচীর স্থাপনের কাজ বাক। এ কাজের জন্যই ফের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এ অবস্থায় অবকাঠামো উন্নয়নের নামে তিন বছর ধরে কবরস্থানে খোঁড়াখুঁড়ি চলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, সংস্কারকাজ চলায় অনেক সময় মরদেহ দাফন এবং কবর জিয়ারতে সমস্যা হচ্ছে।
ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, সংস্থাটির বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে আজিমপুর কবরস্থানের উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় কবরস্থানের দক্ষিণ পাশে স্বচ্ছ কাচের সীমানাপ্রাচীর, চারপাশে প্রশস্ত চলার পথ, পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদ সংলগ্ন ওয়াটার বডি স্থাপন, কবরস্থানের উত্তর (নিউ মার্কেটে গেটের দিকে) ও দক্ষিণে দুটি ভবনসহ পৃথক ফটক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি কবরের নম্বর নির্ধারণ, এলইডি বাতি ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন, কবরস্থান সবুজায়ন, অজুখানা, লাশ গোসল এবং জানাজা নামাজের জন্য পৃথক ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রায় ৭৪ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা আজিমপুর কবরস্থানের উন্নয়নে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ডিএসসিসি। এ কাজগুলো বাস্তবায়নে প্রকল্পের ৪৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী শেডসহ দ্বিতল হাঁটার পথ ও কবরস্থানের উত্তর অংশে কাচের দেয়াল স্থাপন বাকি। সরেজমিনে দেখা যায়, আজিমপুর সুপার মার্কেটের পূর্বপাশে কবরস্থানে ঢোকার প্রধান ফটক এবং একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এই ভবনটিতে কবরস্থানে লাশ দাফনে সংশ্লিষ্টদের অফিস করা হয়েছে। একইভাবে কবরস্থানের উত্তর পাশে নিউমার্কেট রোডে একটি একতলা ভবনসহ ফটক নির্মাণ করা হয়েছে। এখন এই ফটক এবং ভবনে টাইলস এবং পলেস্তরার কাজ করছেন শ্রমিকরা।
কবরস্থানের মাঝ বরাবর আজিমপুর রোড থেকে নিউমার্কেট রোড পর্যন্ত হাঁটার পথ (এক তলা) তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় কোনো কাজ করা হয়নি। এছাড়া কবরস্থানের দক্ষিণ পাশের সীমানাপ্রাচীরে স্বচ্ছ কাচ দেয়া হলেও উত্তর পাশে এখনো কাচ বসানো হয়নি। পশ্চিম পাশের সীমানায় তিন ফুট কংক্রিটের দেয়ালের ওপর লোহার বেড়া দেয়া হয়েছে। পুরো কবরস্থানে এলইডি বাতি স্থাপন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আগের কার্যাদেশ অনুযায়ী এ কবরস্থানের উত্তর ও দক্ষিণ পাশ মিলে ৩২০ মিটার সীমানাপ্রাচীরে স্বচ্ছ কাচ দেয়ার কথা ছিল। বছর দুয়েক আগে দক্ষিণ পাশে তিন ফুট কংক্রিটের দেয়ালের ওপর ছয় ফুট উঁচু কাচ বসানো হয়। কিন্তু বাজেট না থাকায় উত্তর পাশে এখনও কাচ স্থাপন করা হয়নি। এছাড়া একই কারণে শেডসহ দ্বিতল হাঁটার পথ অসমাপ্ত রয়েছে। এখন এই দুটি কাজের জন্য চলতি মাসের শুরুতে ফের দরপত্র (সাত কোটি ৪৫ লাখ ৩১ হাজার টাকা) আহ্বান করা হয়েছে। গত ২২ জুন এ দরপত্র বাক্স উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো নতুন ঠিকাদার নির্ধারণ বা কাউকে কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। কার্যাদেশ দিলে নতুন ঠিকাদার বাকি কাজ শেষ করবেন।
ডিএসসিসির প্রকৌশল দফতর সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে আজিমপুর কবরস্থানের অবকাঠামো উন্নয়নে মেসার্স খোকন ট্রেডিং এজেন্সি ও মেসার্স আমান ট্রেডার্সকে যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যাদেশ দেয় ডিএসসিসি। ওই কার্যাদেশেই ৪৯ কোটি টাকায় পুরো কবরস্থানের উন্নয়নকাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে (২০১৯ সালের এপ্রিল) কাজ শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠান দুটি। ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। ওই সময়ও তারা কাজ গুছিয়ে আনতে পারেনি। এভাবে কাজের মেয়াদ বাড়তে থাকায় মালামালের (পাথর, সিমেন্ট, রড) দামও বাড়তে থাকে। তাই আগের বরাদ্দের টাকা দিয়ে পুরো কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।
মেসার্স আমান ট্রেডার্সের মালিক মোস্তফা সরকার (দক্ষিণ সিটির ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি)। কাজের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজিমপুর কবরস্থানে অবকাঠামো উন্নয়নের নকশা পেতেই চার থেকে পাঁচ মাস সময় লেগেছিল। কাজের শুরুতেই দেরি হয়েছিল। ২০২০ সালের এপ্রিলে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও করোনা তথা লকডাউনের কারণে কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এভাবে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সময় বেশি লেগেছে। এখন আগের বরাদ্দ অনুযায়ী বাকি কাজ শেষ করতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে।
যথাসময়ে কবরস্থানের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজটি শেষ না করায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক। তিনি বলেন, ‘অবকাঠামো উন্নয়ন করায় কবরস্থানের সৌন্দর্য বেড়েছে এবং এখন চলার পথে খুব সহজেই কবরস্থান বা সারিবদ্ধ কবরের দিকে দৃষ্টি পড়বে। এতে মানুষের মনে পরকালের চিন্তা কাজ করে। তিন বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলায় কিছুটা হতাশা প্রকাশ করছেন মহল্লার লোকজন।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মুন্সি মো. আবুল হাসেম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে কবরস্থানের প্রকল্পের কাজ শেষ করতে দেরি হয়েছে। আগের বরাদ্দের টাকা দিয়ে যে কাজ হওয়ার কথা, এখন তা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে ‘অ্যাডিশনাল টেন্ডার’ আহ্বান করা হয়েছে। আশা করি নতুন ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়ার তিন-চার মাসের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে।
সূত্র : জাগো নিউস ২৪