রংপুর বিভাগের ৫ মন্ত্রী আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে ৫ মন্ত্রীর মধ্যে ৩ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১০ জনেরও বেশি প্রার্থী মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছেন। ফলে দলীয় মনোনয়ন পেলেও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হতে হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। শুধু তাই নয় ওই মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণাও দিয়েছেন কেউ কেউ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড়-২ আসনের এমপি রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি আবারও এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। জেলার বোদা ও দেবীগঞ্জ দুই উপজেলা নিয়ে পঞ্চগড়-২ আসন। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৯৪৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯৪ হাজার ৬১ জন। এ আসনে রেলমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেননি। তবে ওই আসনে আওয়ামী লীগের অন্য কোনও প্রার্থী না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আরও দুজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, দিনাজপুর-২ আসনের বর্তমান এমপি নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আবারও এই আসনে নির্বাচন করার জন্য দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৯ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৬ জন। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর আসনে আরও দুজন দলীয় নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি আবারও দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। নির্বাচনে তাকেও অন্যান্য দলের প্রার্থীর সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই জয়ী হতে হবে বলে মনে করেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে, লালমনিরহাট-২ আসনের এমপি সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। আগেরবারের মতো এবারও এই আসনে নির্বাচন করার জন্য দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন তিনি। আসনটি লালমনিরহাট জেলার দুই উপজেলা কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলা নিয়ে গঠিত। মোট ভোটার ৪ লাখ ১ হাজার ৬৫৭ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১ হাজার ৫০৬ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১৫১ জন। এই আসনে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আরও ১০ জন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে তার ভাই কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মাহাবুবুজ্জামান আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি সিরাজুল হক, যুবলীগ নেতা নজরুল মৃধা, স্থানীয় দলগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ বাবুল, আদিতমারী উপজেলা চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েশ ফারুখ, আওয়ামী লীগ নেতা এমদাদুল হক ও মমতাজ উদ্দিন শান্ত মনোনয়ন চেয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন কে পাবেন তা নিশ্চিত নয়। তবে মন্ত্রীর ছোট ভাই মাহাবুবুজ্জামান আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে গণসংযোগ করছেন। অপরদিকে এই আসনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। শেষ পর্যন্ত কে মনোনয়ন পায় তা নিশ্চিত নয় বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। মন্ত্রী মনোনয়ন পেলেও তার ছোট ভাই তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেবেন না বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
কুড়িগ্রাম-৪ আসনের এমপি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। আসনটি কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৭৭৮ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ২১২ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৬৭জন। নদী ও চরাঞ্চলবেষ্টিত এই আসনে জয়ী হওয়া খুবই কষ্টকর।
এবার ওই আসন থেকে ১৫ জনেরও বেশি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছেন। এদের মধ্যে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ছক্কু মিয়ার বড় ছেলে রংপুর আইন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সাজেদ হোসেন তোতা, আওয়ামী লীগ নেতা হাসান পলাশ বিপ্লব, রেজাউল করিম মানু, রহিমুজ্জামান সবুজ, রেজাউল করিম লিটুসহ বাঘা বাঘা নেতারা রয়েছেন। ফলে এবার এই আসনে আওয়ামী লীগের টিকিট কে পাবেন তা নিশ্চিত নয়। ফলে শেষ পর্যন্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন দলীয় মনোনয়ন পেলেও তার বিরুদ্ধে দলের বেশ কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে। ফলে দলীয় কোন্দল মিটিয়ে জয়ী হওয়া চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
রংপুর-৪ আসনের এমপি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি এই আসন থেকে তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। আসনটি পীরগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪৩ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৯৮ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ৮৪১ জন। এবারের নির্বাচনে তাকেও নিজের দলের বেশ কয়েকজন ডাকসাইটে নেতার সঙ্গে মনোনয়ন যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ৮ নেতা মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছেন। এদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুল, কাউনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া, বিশিষ্ট আইনজীবী রফিক হাসনাইন, ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন বেশ শক্তিশালী প্রার্থী। সবচেয়ে বড় সমস্যা দলীয় কোন্দল। বিশেষ করে কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। সেখানে দলীয় কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। নির্বাচনের আগে কোন্দল মেটানোর কোনও উদ্যোগ সফল হয়নি। অন্যদিকে টিপু মুনশির নিজ উপজেলা পীরগাছায় বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি বেশ শক্তিশালী। ফলে শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন পেলেও জয়ী হতে ঘাম ঝরাতে হবে বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
সবকিছু মিলিয়ে রংপুর বিভাগে ৫ মন্ত্রী দলের মনোনয়ন পেলেও সহজভাবে জয়লাভের সম্ভাবনা নেই। বরং কঠোর লড়াই করে জয়ী হতে হবে বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।