দিনাজপুরে হঠাৎ ঝড়ে উড়ে গেছে টিনের চালা, ভেঙে পড়েছে গাছ, বৈদ্যুতিক পিলার। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছেন স্থানীয়রা। এখন পর্যন্ত জেলা শহরসহ আশপাশের এলাকা বিদ্যুৎবিহীন। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, এই ঝড়ে জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় ১২০০ বাড়িঘরে ক্ষতি হয়েছে। নিরূপণ করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
বুধবার (৩০ মে) দিবাগত রাত ১টা ৪৬ মিনিট থেকে ১টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত পাঁচ মিনিটের ঝড়ে লন্ডভন্ড দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা। উড়ে গেছে টিনের চালা, ভেঙে ও উপড়ে পড়েছে বড় বড় গাছ। বৈদ্যুতিক পিলার ভেঙে পড়ায় পুরো বিচ্ছিন্ন সংযোগ। বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে লিচু গাছেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এই অবস্থাতে সহযোগিতা কামনা করেছেন নিম্নআয়ের মানুষ।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, এই ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার। সেই সঙ্গে শিলাবৃষ্টিও হয়েছে কিছু স্থানে।
দিনাজপুরে মাহমুদপুর এলাকার পারভিন বলেন, আমরা খুব অসহায়। আমরা দিন এনে দিন খাই। আমরা যে এখন খাবো, কিছু নাই। বাড়িতে বিদ্যুৎ নাই, খাবার নেই। এখনো কোনও মেম্বার-চেয়ারম্যান আমাদের এখানে আসেনি। আমরা একটু সহযোগিতা চাই।
একই এলাকার রোজিনা খাতুন বলেন, আমরা খুব অসহায় খুব গরিব মানুষ। দিন এনে দিন খাই। আমাদের কোনও অর্থ নেই। এখন বাড়ি ভেঙে গেছে, নতুন করে যে বাড়ি করবো এই অর্থ নাই। কারেন্টের পিলার আমাদের বাড়ির ওপর পড়েছে। বাড়িঘরের টিন উড়ে গেছে, সেগুলো আর পাওয়া যায়নি। ঘরে যা ছিল সব উড়ে গেছে, ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন দিন চলায় আমাদের মুশকিল।
সালমা বেগম বলেন, রাত ১টার ঘটনা, বাড়ির টিনসহ সবকিছু উড়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের খোঁজ নিতে কেউ আসেনি।
জেসমিন বলেন, আমাদের বাড়ির বেড়া, টিন সব উড়ে নিয়ে গেছে। পাশের বাড়িরও একই অবস্থা। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আমাদের এই ঝড়ের কারণে। এখন বাড়ি ঠিক করবো, নাকি কাজে যাবো। রাতে কোথায় থাকবো সেটাও নিশ্চিত না। এখন টিনের যে দাম এই টাকা কোথায় পাব সেই চিন্তায় আছি।
মাসিমপুর এলাকার মিম বলেন, আমাদের এলাকার বেশ কয়েকটি ঘরের টিন একদম নাই। টিনগুলো ২০০ মিটার দূরে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এলাকায় এই ধরনের ঝড় আমি কখনও দেখিনি। এখন সকাল থেকে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, কোনও কিছুই নেই। কখন বিদ্যুৎ সংযোগ দেবে কি না সেটাও নিশ্চিত না। মোটামুটি রাতে অন্ধকারে থাকতে হবে।
মাসিমপুর এলাকার মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, আমাদের মাসিমপুর এলাকার বেশ কয়েকটি বাগানের লিচুর ডাল, কোথাও আবার পুরো গাছ ভেঙে গেছে। ফলে এবারে এমনিতেই লিচুতে লোকসানের আশঙ্কা ছিল, ঝড়ের কারণে সে আশঙ্কা আরও বেশি বেড়ে গেছে। এখন যে লিচু ঝড়ে গেছে সেসব একেবারেই পুরোপুরি ক্ষতি।
নুরুজ্জামান বলেন, ঝড়ের কারণে অনেক ক্ষয়ক্ষতি। অনেক ডাল ভেঙেছে, একেবারে অবস্থা খারাপ। সব লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যে ক্ষতি হয়েছে, যে দাম দিয়ে বাগান কিনেছি সেই টাকাটাই উঠবে না।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় ১২০০ বাড়িঘরে ক্ষতি হয়েছে। তালিকা করে প্রতিটি পরিবারে ৩০ কেজি করে চাল ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনও ক্ষতিগ্রস্ত একটি পরিবারও প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতার বাইরে থাকবে না।