৬০০ টাকার বাসের টিকিট কালোবাজারে ২ হাজার
বাংলাদেশ

৬০০ টাকার বাসের টিকিট কালোবাজারে ২ হাজার

রংপুরে কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে বাসের টিকিট। ৬০০ টাকার টিকিট মিলছে দুই হাজারে। বাস কাউন্টারগুলো থেকে যাত্রীদের বলা হচ্ছে, টিকিট শেষ। আগামী ১১ মে পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তবে কালোবাজারি সিন্ডিকেটের সদস্যদের দুই হাজার টাকা দিলে টিকিট পাইয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

শুক্রবার (০৬ মে) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরের কামারপাড়া বাসস্ট্যান্ডে ঘুরেও টিকিট পাননি যাত্রীরা। কেউ কেউ ৬০০ টাকার টিকিট দুই হাজারে কিনে গন্তব্যে গেছেন। তবে অধিকাংশ যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন। শুক্রবার রাত পর্যন্ত কামারপাড়া বাসস্ট্যান্ডে বিভিন্ন বাসের কাউন্টারে টিকিটের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে যাত্রীদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কামারপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় দুই শতাধিক এসি ও নন-এসি বাস চলাচল করে। করোনার কারণে দুই বছর পর রংপুরে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে এসেছেন লাখো মানুষ। শুক্রবার ঢাকায় ফিরে শনিবার অফিস করতে টিকিটের জন্য বাস কাউন্টারে আসেন অনেক যাত্রী। 

এসআর ট্রাভেল, আগমনী এক্সপ্রেস, হানিফ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, নাবিল ও এনাসহ বিভিন্ন বাস কাউন্টারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পাননি কোনও যাত্রী। এতে ভোগান্তিতে পড়েন তারা।

যাত্রীরা জানিয়েছেন, ঈদের আগে এবার কোনও বাস কাউন্টার অগ্রিম টিকিট বিক্রির ঘোষণা দেয়নি। রংপুরের এসআর ট্রাভেলের প্রধান কাউন্টার ম্যানেজার মো. রিপন আগাম টিকিট বিক্রি করেননি। ঈদের পরদিন থেকে বিক্রি হবে বলে কয়েকশ টিকিট নিজের কাছে রেখে যাত্রীদের জিম্মি করে কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন রিপন। এ অবস্থায় ঈদের পরদিন কাউন্টার বন্ধ রাখা হয়। এতে বিপাকে পড়েন যাত্রীরা।

নগরের বাসিন্দা পারভেজ আলমগীর ও নাফিসা আক্তার বলেন, ‘আমরা ঢাকায় যাওয়ার জন্য এসআর ট্রাভেলের কাউন্টার ম্যানেজার রিপনের কাছে আগাম টিকিট চেয়েছি। তিনি ঈদের পরদিন থেকে বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত টিকিট পাইনি। এসআর ট্রাভেলের ঢাকা অফিসে অভিযোগ করেও কোনও কাজ হয়নি। এরপর আগমনী, হানিফ, শ্যামলী ও এনাসহ বিভিন্ন বাস কাউন্টারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পাইনি। কাউন্টারগুলো থেকে বলা হচ্ছে, টিকিট বিক্রি শেষ।’

যাত্রীদের অভিযোগ, টিকিট দেওয়ার কথা বলে অনেক যাত্রীকে শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে রেখেও টিকিট দেওয়া হয়নি। বেশিরভাগ কাউন্টার কালোবাজারে টিকিট বিক্রি করে দিয়েছে। 

শুক্রবার সন্ধ্যায় কামারপাড়া বাসস্ট্যান্ড ও ঢাকা কোচ বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত যাত্রী টিকিটের জন্য কাউন্টারগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। টিকিটের জন্য এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ছুটছেন। কিন্তু কোনও বাস কাউন্টারে টিকিট পাননি যাত্রীরা।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরের কামারপাড়া বাসস্ট্যান্ডে ঘুরেও টিকিট পাননি যাত্রীরা

চট্টগ্রামগামী বাসের টিকিট কিনতে আসা নগরীর বাসিন্দা আবু সাদ্দাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার হানিফ, শ্যামলী ও নাবিল কাউন্টারে এসে ঘুরে গেছি। তখন বলা হয়েছিল, শুক্রবার থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন কাউন্টারে ঘুরেও টিকিট পাইনি। পরে কালোবাজারির কাছ থেকে দুই হাজার টাকায় একটি টিকিট কিনেছি। অথচ এই টিকিটের দাম এক হাজার টাকা।’

সাবিহা মাহবুব ও মোনতাসির মামুন বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছি। আমরা চট্টগ্রামে চাকরি করি। শনিবার চাকরিতে যোগ দিতে হবে। সকাল এবং বিকালে কাউন্টারে এসেও টিকিট পাইনি। তারা আমাদের জিম্মি করে কালোবাজারে টিকিট বিক্রি করছে। আমরা এই জিম্মি দশা থেকে মুক্তি চাই।’

হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার হোসেন আলী বলেন, ‘টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। মানুষের চাপ বেশি। টিকিটের চাহিদা অনেক। প্রতিদিনের টিকিট প্রতিদিন বিক্রি করছি আমরা। টিকিট না থাকলে কোথায় থেকে দেবো।’

শ্যামলী পরিবহনের ম্যানেজার মো. সফি বলেন, ‘১১ মে পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।’ কাদের কাছে টিকিট বিক্রি করা হলো, কবে থেকে বিক্রি শুরু হয়েছিল, কবে শেষ হলো জানতে চাইলে এসব প্রশ্নের উত্তর দেননি সফি।

কেউ কেউ ৬০০ টাকার টিকিট দুই হাজারে কিনে গন্তব্যে গেছেন

আনোয়ারা বেগম ও পোশাককর্মী মমতাজ বেগম বলেন, ‘দুই দিন ধরে গাজীপুরের টিকিট নেওয়ার জন্য এনা পরিবহনের কাউন্টারে ঘুরছি। আজ টিকিট দেবে বলেও দেয়নি। আমাদের রবিবার কাজে যোগ দিতে হবে। ৬০০ টাকার টিকিট দুই হাজার চাচ্ছে কালোবাজারি সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এখন আমরা কীভাবে গাজীপুরে যাবো?’ 

নগরীর বাসিন্দা শাহরুখ আজিজ ও লাবলু বলেন, ‘যাত্রীদের কাছে তারা কোনও টিকিট বিক্রি করেনি। এসআর ট্রাভেল, আগমনী এক্সপ্রেস, শ্যামলী, এনা ও হানিফসহ সব বাসের ম্যানেজার সিন্ডিকেট করে সব টিকিট কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। ফলে ৬০০-৭০০ টাকার টিকিট কালোবাজারিদের কাছ থেকে দুই হাজারে কিনতে হচ্ছে যাত্রীদের।’

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আবদুল আলীম মাহমুদ বলেন, ‘বাসের টিকিট নিয়ে কালোবাজারিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেন আগাম টিকিট বিক্রির ঘোষণা দেওয়া হয়নি বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো। প্রয়োজনে সব বাসের কাউন্টারে অভিযান চালানো হবে।’

রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ওসি মাহফুজার রহমান বলেন, ‘ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরতে বাসের টিকিট না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। টিকিটের জন্য যাত্রীরা এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ঘুরছেন। কাউন্টারগুলো থেকে বলা হচ্ছে, টিকিট নেই। ঈদ করতে আসা মানুষ কর্মস্থলে ফিরতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন বাসের কাউন্টার ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা টিকিটের ব্যবস্থা না করলে কঠোর ব্যবস্থা নেবো আমরা।’

Source link

Related posts

ঝড়ে উপড়ে গেছে গাছ, ভেঙেছে বিদ্যুতের খুঁটি

News Desk

নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে কুমিল্লা

News Desk

আমদানি করা মোবাইল ফোনের দাম বাড়বে

News Desk

Leave a Comment