৭৮ দিন পর গ্রামের বাড়িতে তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ যুবকের মরদেহ
বাংলাদেশ

৭৮ দিন পর গ্রামের বাড়িতে তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ যুবকের মরদেহ

অবশেষে গ্রামের বাড়ি পৌঁছালো তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ বাংলাদেশির যুবকের মরদেহ। ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মারা যাওয়ার ৭৮ দিন পর বাড়িতে লাশ পৌঁছালে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্বজনরা। পরে লাশগুলো দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে। এতে একদিকে আদরের সন্তানদের হারিয়ে দিশেহারা পরিবার, অন্যদিকে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী।

নিহতরা হলেন-মাদারীপুরের রাজৈরের কোদালিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান কাজীর ছেলে সজীব কাজী (১৯), পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২২), সেনদিয়ার গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগী (২২), উত্তরপাড়া গ্রামের পরিতোষ বিশ্বাসের ছেলে নয়ন বিশ্বাস (২৪), কেশরদিয়া গ্রামের কাওসার (২২), গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের দাদন মিয়ার ছেলে রিফাদ (২১), ফতেয়পট্টি এলাকার মো. রাসেল (২০) ও গয়লাকান্দি গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে ইসরুল কায়েস আপন (২২)। ৮ বাংলাদেশি ছাড়াও এই দুর্ঘটনায় এক পাকিস্থানি নাগরিক মারা যান। কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টগার্ড।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যার কিছু সময় আগে অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজধানী ঢাকা থেকে নিয়ে আসা হয় নিহত মামুন শেখের মরদেহ। অ্যাম্বুলেন্সে আসার খবরেই বুকফাটা আর্তনাদ নিহত মামুনের মা হাফিজা বেগমের। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী চারপাশ। মামুনের লাশ বাড়িতে পৌঁছানোর পর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্বজনরাও। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে তিউনিসিয়া থেকে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দের পৌঁছায় নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ। পরে মরদেহগুলো নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যালে। আইনি প্রক্রিয় শেষে শুক্রবার দুপুরে পরিবারের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেয় ঢাকা জেলা প্রশাসন ও বিমানবন্দর থানা পুলিশ। পরে মরদেহগুলো নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈরে ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। ধর্মীয় রীতি শেষে নিহতদের দাফন করা হয় নিজ নিজ পারিবারিক কবরস্থানে।

স্বজনরা জানায়, গত ১৪ জানুয়ারি রাজৈর ও মুকসুদপুরের কয়েকজন যুবক ইতালির উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। প্রথমে তারা বিমানে করে লিবিয়া, পরে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া থেকে দালালদের মাধ্যমে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। মাঝপথে তিউনিসিয়ার ভূমধ্যসাগরে ইঞ্জিন ফেটে আগুন ধরে ডু্বে যায় নৌকাটি। এতে রাজৈরের কোদালিয়ার সজীব কাজী, পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের মামুন শেখ, সেনদিয়ার সজল বৈরাগী, কদমবাড়ির নয়ন বিশ্বাস এবং কেশরদিয়া গ্রামের কাওসার ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের রিফাদ, রাসেল ও আপনের মৃত্যু হয়।

ঘরের সামনে স্বজনদের আহাজারি

স্বজনদের অভিযোগ, মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য মুকসুদপুরের গজারিয়া গ্রামের রহিম শেখ ও সুন্দরদী গ্রামের মোশারফ কাজী প্রত্যেকের পরিবারের কাছ থেকে ১০-১৫ লাখ টাকা করে নেয়। পরে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালি পাঠালে ঘটে এই দুর্ঘটনা। এই ঘটনার দালালদের বিচার দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

নিহত মামুনের বড় ভাই সজীব শেখ বলেন, আমার ভাইয়ের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। এভাবে যেন কেউ অবৈধ পথে কাউকে বিদেশে না পাঠায়। দালালরা মুখে বলে এক কথা, আর কাজে আরেক। কথার সঙ্গে কাজের কোনও মিল নাই।

এদিকে নিহত সজল বৈরাগীর ফুফাতো বোন আরতী বৈরাগী বলেন, আমার মামাতো ভাইয়ের মতো যেন আর কারো মৃত্যু না হয়। সজলের অকাল মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ধারদেনা করে দালালদের লাখ লাখ টাকা দিলেও নিরাপদে ইতালি পৌঁছাতে পারেনি আমার ভাইকে। এমন ঘটনায় দোষীদের বিচার হওয়া উচিৎ।

কান্নায় ভেঙে পড়েন এই যুবক

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, তিউনিসিয়ায় নিহতের মরদেহ নিজ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে। দাফনও সম্পন্ন হয়েছে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার আইনগত সহযোগিতা চাইলে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, অবৈধভাবে সমুদ্রপথে বিদেশযাত্রা বন্ধের জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। মানুষ সচেতন হলে অকালে এমন মৃত্যু আর হবে না। এ জন্য জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।

Source link

Related posts

অপরাধ করলে আইন আছে, গুলি করে মারা হবে কেন?

News Desk

দেবতাখুম: অরণ্যের মাঝে বিস্ময়

News Desk

৩০০ যাত্রী নিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার উদ্দেশে বেনাপোল এক্সপ্রেস

News Desk

Leave a Comment