দীর্ঘ আট বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) নাটোর শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনে এখন পর্যন্ত সভাপতি পদে তিন জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে তিন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে।
সভাপতি পদে প্রার্থীরা হলেন—বর্তমান সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস, সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এবং অপর সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম।
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীরা হলেন—বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান এবং বনপাড়া পৌর মেয়র কে এম জাকির হোসেন।
এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ ওই পদ পেতে কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তবে দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে যে পদে দায়িত্ব দেবেন, তার প্রতি আস্থাশীল হবেন তারা।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নাটোরের এই সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার আসনগুলোতে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে জেলা কমিটি। এমন অবস্থায় নাটোরকে একটি যোগ্য ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কমিটি উপহার দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর আসনের এমপি আব্দুল কুদ্দুস। অপরদিকে নাটোর সদর আসনের সংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক। আট বছর আগে গঠিত ওই কমিটি কিছুদিন স্থিতিশীল থাকলেও পরবর্তী সময়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দীর্ঘ পথচলার পরিক্রমায় বর্তমানে সভাপতির নেতৃত্বে রয়েছে একটি গ্রুপ।
অপরদিকে, সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে রয়েছে আরেকটি গ্রুপ। সম্মেলন ঘিরে উভয় গ্রুপ চাচ্ছে তাদের পছন্দের মানুষ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকবে। গঠিত হবে তাদের পছন্দের নেতাদের সমন্বয়ে কমিটি।
কাউন্সিলররা জানান, আব্দুল কুদ্দুসের নেতৃত্বে ওই গ্রুপ চাচ্ছে সভাপতি হবেন আব্দুল কুদ্দুস। পাশাপাশি সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান অথবা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মালেক শেখকে চাচ্ছেন। এছাড়া অন্যান্য পদের জন্য রয়েছেন গ্রুপ মনোনীত সদস্যরা। ওই গ্রুপকে জেতাতে চালানো হচ্ছে লবিং-গ্রুপিং এবং কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগাযোগ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আব্দুল কুদ্দুস বলেন, সঠিক নেতৃত্ব চাইলে আমাকে সভাপতি করতে হবে। আমার বিকল্প দেখি না।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, যারা জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে হাইব্রিড নেতাদের স্থান দিয়েছেন, দেশ থেকে টাকা পাচার করে কানাডায় বাড়ি করেছেন, পুরাতন ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাদের বঞ্চিত করেছেন, তারা নিশ্চয়ই জেলা আওয়ামী লীগের পদে আসতে পারবেন না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাটোরের সব খবর জানেন দাবি করে তিনি বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল মানুষদের কথা বিবেচনায় নিয়ে শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই নাটোরে যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করবেন।
শফিকুল ইসলাম শিমুল দাবি করেন, তিনি সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী তাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা গুরুত্ব সহকারে পালন করেছেন। প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্দেশমতো নৌকাকে জয় করতে মাঠে থেকেছেন। প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া মতো তিনি সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু জেলায় কোনও মিছিল-মিটিং সমাবেশ করতে পারেননি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিবেচনায় নাটোরে নৌকার পক্ষে বিজয় আনতে প্রধানমন্ত্রী যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। প্রধানমন্ত্রী যাকে যে পদ দেবেন তাকে মেনে নেবেন শফিকুল ইসলাম শিমুল।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু টাকা দিয়ে জেলার কিছু নেতাদের দাঁড় করিয়েছেন। এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নাটোর-নওগাঁ সংরক্ষিত আসনের এমপি রত্না আহমেদ ও কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগ নেত্রী কুহেলি কুদ্দুস মুক্তি বলেন, নাটোরের সমস্ত প্রেক্ষাপট জানেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী দিনে নাটোরের তৃণমূল মানুষের পাশাপাশি অবহেলিত, যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের বিষয়েও জানেন প্রধানমন্ত্রী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যোগ্য নেতা কে হবেন তা নির্ধারণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনে নাটোরের তৃণমূল ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন হবে, সঠিক নেতৃত্ব আসবে। যার মাধ্যমে নাটোরের চারটি আসন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী উপহার পাবেন। এমন যোগ্য কমিটি নাটোরকে দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।