আগামী ১ মের অগ্রিম ট্রেনের টিকেটের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে কাঁথা-বালিশ, চেয়ার, খবরের কাগজ পেতে আজ দুপুর থেকেই শুয়ে বসে সময় কাটাচ্ছেন টিকেট প্রত্যাশী শত শত যাত্রী। আগামীকাল বুধবার ১ মের টিকেট দেয়া হবে। আবার যারা আজ মঙ্গলবার লাইনে দাড়িয়ে ৩০ এপ্রিলের ট্রেনের টিকেট পাননি, তাদের অনেকেই বাসায় না ফিরে আগামী বুধবারের টিকেট কাটার লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দুপুর ১টা নাগাদ কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। আগামী ২৪ ঘন্টা অপেক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন যাত্রীরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, কমলাপুর রেলস্টেশনের প্রায় সব কাউন্টারের সামনে খবরের কাগজ বিছিয়ে, চেয়ার পেতে বসে পড়েছেন যাত্রীরা। তারা জানান, ৩০ এপ্রিলের টিকেটের জন্য তারা আজ সেহরি খেয়ে লাইনে দাড়িয়েও টিকেট পাননি। যার ফলে আবারো টিকেটের জন্য অপেক্ষা করতে রাজি তারা। যে কোন প্রকারেই টিকেট চান, ঈদে বাড়ি যেতেই হবে। এদের প্রায় সকলের হাতে স্মার্টফোন, অনেকেই অন লাইনে টিকেট কাটার চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ কিছুক্ষণ পরপর স্মার্টফোনে গেমস খেলছেন। বিরতি দিয়ে আবার ফেসবুকে ঢুকছেন। এভাবেই কেটে যাচ্ছে সময়। এদের অধিকাংশই রোজদার বলে জানা গেছে। অনেকেই শুয়ে পড়েছেন ছোট কাথা বালিশ পেতে। বিশেষ করে দশ বারো জন নারীকে দেখা গেল স্টেশন চত্ত্বরে বেডশিট পেতে শুয়ে বসে অপেক্ষা করতে। তাদের একজন ফাতেমা। তিনি বলেন, খুলনা যাবার জন্য টিকেট দরকার। কিন্তু এত ভিড় যে আজকেই বোন কে নিয়ে স্টেশনে চলে এসেছি, যাতে করে যে কোন ভাবেই ১ এপ্রিলের চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের চারটে টিকেট পাই। সঙ্গে চার জনের এনআইডি কার্ডের ফটোকপিও দেখান ফাতেমা।
মিরপুরের একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বাদল জানান, ১ তারিখ অফিস হয়ে ছুটি, সেকারণে ওই দিন রাতের ট্রেনের দুটো টিকেট দরকার। স্ত্রী সন্তান সম্ভাবা, তাই ট্রেনে যাওয়া ছাড়া গতি নেই। যার জন্য যত কষ্টই হোক দুটো টিকেট চাই। ঈদুল ফিতরের ছুটি কাটাতে আগামী ১ মে ট্রেনে গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে চান।
রেলওয়ের ঘোষণা অনুযায়ী কাল বুধবার ১ মের টিকিট কাউন্টারে এবং অনলাইনে বিক্রি হবে। তাহলে একদিন আগে কেন এসেছেন- জানতে চাইলে বাদল বলেন, রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনলাইনে ৫০ শতাংশ এবং কাউন্টারে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে অনলাইনে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে আগে ভাগেই টিকিট কাটতে এসেছি। টিকিট না পেলে ঈদে স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামে যাওয়া হবে না। যেকোনভাবেই দুটো টিকেট চাই তার।
শুধু ফাতেমা বা বাদলই নন, এদের মত শত শত যাত্রী ঈদ টিকেটের জন্য আজ দুপুর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন চত্ত্বরে প্রায় ২৪ ঘন্টা অপেক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। এদের প্রায় সকলেই রোজদার। ইফতারি, সেহরি, বাথরুম, টয়লেট সবই স্টেশনে। এমন অসংখ্য টিকিটপ্রত্যাশী গতকাল থেকে কমলাপুরে অবস্থান নিয়েছেন।
এদিকে আজ মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত ৩০ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। টিকিট না পেয়ে অনেকেই ফিরে গেছেন। আবার অনেকেই পুনরায় লাইনে দাড়িয়েছেন।
অধিকাংশ যাত্রীরা বলছেন, অন লাইনে ঢোকাই যাচ্ছে না, সকাল আটটা থেকে বহু চেষ্টা করেও অনেকেই অনলাইনে প্রবেশই করতে পারেনি। আবার অনেকে ঢুকতে পারলেও টিকেট কাটার সময় বাফারিং হচ্ছে, যাত্রীরা সার্ভার ডাউনের অভিযোগ করেছেন।
কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানিয়েছেন, রেলের ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে এবং বাকি ৫০ শতাংশ কাউন্টারে বিক্রি হচ্ছে। তবে অনলাইনে অনেকে টিকিট না পেয়ে কাউন্টারে ভিড় করছেন। বিষয়টি নিয়ে রেলওেয়ের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছেন। তা ছাড়া সহজ ডট কমকে নতুন করে অন লাইন টিকেটিং এর দায়িত্ব দেবার পরে যাত্রীরা টিকেট কাটতে পাচ্ছেন না বলে বিস্তর অভিযোগ। যদিও সহজ এর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সকাল ৮টায় সার্ভার ওপনে করার পর পরই লাখ লাখ হিট হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে টিকেট সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।