গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর থানা এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পর চালককে পুকুরে ফেলে হত্যার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার ইলতুৎমিশ।
নিহত হুমায়ুন কবির রংপুর সদর থানার কাটাবাড়ী গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে। তিনি বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবারের সঙ্গে গাজীপুর মহানগরের দেশিপাড়া এলাকায় থাকতেন। অটোরিকশা চালিয়েই জীবিকা নির্বাহ করতেন।
আর এ ঘটনায় গ্রেফতাররা হলো- কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার লক্ষীপুর (গুচ্ছগ্রাম) এলাকার খোরশেদ আলমের ছেলে আলমগীর হোসেন (৩০), পাবনার আতাইকোলা উপজেলার বাউখোলা (ঘোনাপাড়া) গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে শামসুল হক, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বড়তা গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে হাফিজুর রহমান টুকু (৩৬), একই উপজেলার গাববাড়ী (সরদারবাড়ী) গ্রামের আব্দুল হাকিম সরদারের ছেলে আল-মামুন সরদার এবং নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পালোরা গ্রামের মৃত আবদুর রশিদের ছেলে রফিকুল ইসলাম।
পুলিশের উপ-কমিশনার ইলতুৎমিশ জানান, ছিনতাইকারীরা গত ৯ ফেব্রুয়ারি ঝালমুড়ি বিক্রেতা সেজে হুমায়ূন কবিরকে ঝালমুড়ির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মহানগরের সালনা থেকে অটোরিকশাসহ কোনাবাড়ি নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে চালক হুমায়ুন জ্ঞান হারালে তাকে কাশিমপুর লোহাকৈর এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে চলে যায় ছিনতাইকারীরা। রাত ১২টার দিকে ছিনতাইকারীরা হুমায়ুনকে আবার দেখতে আসে। তারা হুমায়ুনকে লোহাকৈর এলাকায় একটি চায়ের দোকানে বসে থাকতে দেখে। মধ্য রাতে দোকান বন্ধ হয়ে গেলে তারা হুমায়ুনকে কৌশলে পুকুর পাড়ে নিয়ে হুমায়ুনকে ধাক্কা দিয়ে পুকুরে ফেলে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
এ ঘটনার তিন দিন পর ১২ ফেব্রুয়ারি হুমায়ুনের মরদেহ পুকুরে ভেসে উঠলে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত আলমগীর ও শামসুলকে বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাফিজুর রহমান টুকু এবং আল আমিনকে বরিশালের উজিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। রফিকুল ইসলামকে সদর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা ঘটনার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দেয়।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতাররা পেশাদার অটোরিকশা ছিনতাইকারী। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় আরও একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত অটোরিকশা, ভিকটিমের মোবাইল, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সিএনজি, বিভিন্ন সময়ে লুণ্ঠিত বিভিন্ন ইজিবাইকের খন্ডিত অংশ, ঝালমুড়ি বিক্রির উপকরণ, অটোরিকশার খোলায় ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্র ও রঙ করার উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রেজওয়ান আহমেদ, সহকারী কমিশনার বেলাল হোসেন, রিপন চন্দ্র সরকার, কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবে খোদা।
উল্লেখ্য, হুমায়ুন কবির গত ৯ ফেব্রুয়ারী বেলা পৌনে ১২টায় মহানগরের দেশিপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে অটো নিয়ে বের হয় আর বাসায় ফেরেননি। পরে তার পরিবারের পক্ষ থেকে গাজীপুর মহানগরের সদর থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এর তিন দিন পর ১২ ফেব্রুয়ারি হুমায়ূনের মরদেহ কাশিমপুর লোহাকৈর এলাকায় পুকুরে ভেসে উঠলে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়।