নোয়াখালী সদর উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. শহিদুল ইসলাম (৪০)। জ্বর নিয়ে শুক্রবার (০৮ সেপ্টেম্বর) সকালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন। এটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড। বেড খালি না থাকায় ওয়ার্ডের বাইরে বিছানা বিছিয়ে শুয়ে আছেন। সেখানে চলছে চিকিৎসা। তবে ডেঙ্গু ওয়ার্ড খালি। রোগীদের কেউ ওয়ার্ডের বাইরে বিছানা পেতে বসে আছেন, কেউ হাসপাতালের বাইরে ঘোরাফেরা করছেন। এর মধ্যে কারও কারও হাতে ক্যানুলা। বাইরে ঘোরাফেরার কারণ জানতে চাইলে রোগীরা বললেন, ‘অডিট টিম আসবে, তাই আমাদের বাইরে দাঁড় করিয়ে চলছে হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ।’
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, তিন জন ওয়ার্ডবয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। এর মধ্যে একজন জানালা পরিষ্কার করছেন, আরেকজন ফ্যান ধোয়ামোছা করছেন, অপরজন দেয়াল এবং মেঝে পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত। ওয়ার্ডের নার্সরা রেজিস্টার খাতা অনুযায়ী মেডিসিনের হিসাব-নিকাশ মেলানোর কাজে মগ্ন। একই অবস্থা হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডেরও।
ওয়ার্ডবয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, আগামী দুই-একদিনের মধ্যে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মানসহ যাবতীয় বিষয় দেখভাল করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অডিট টিম ঢাকা থেকে আসার কথা রয়েছে। তাই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ ওয়ার্ড এবং কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন।
হাসপাতালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন ৪৫ জন। সবার শারীরিক অবস্থা ভালো। তাদের চিকিৎসা চলছে। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন আরও ২৭ জন। এর মধ্যে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ১০ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ১৭ জন ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৯২ জন। জেলায় এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৫৩৫ জন। যার মধ্যে মারা গেছেন দুই জন।
ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চার দিন আগে ভর্তি হয়েছেন লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরবসুর বাসিন্দা মো. সেলিম (৬৫)। মশারি টানানো ছাড়াই হাতে থাকা স্যালাইনের ক্যানুলাসহ ডেঙ্গু ওয়ার্ডের পাশে বসে আছেন। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন তার স্ত্রী। এই প্রতিবেদককে সেলিম বলেন, ‘এখানে ভর্তি হয়েছি আজ চার দিন। এখনও জ্বর কমেনি। হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা কিছু ওষুধ দিয়েছেন। আরও কিছু বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে রুম পরিষ্কার করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাই আমাদের বাইরে পাঠানো হয়েছে। শুনেছি, তাদের নাকি অডিট টিম আসবে। তাই সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতেছেন।’
বেগমগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর থেকে আসা ডেঙ্গু রোগী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘সকাল থেকে ওয়ার্ড পরিষ্কার করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আমাদের বাইরে অপেক্ষা করতে বলেছেন তারা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হলে আমাদের ওয়ার্ডের ভেতরে ডাকবেন বলেছেন।’
ডেঙ্গু রোগীদের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স কামরুন্নাহার লাভলী বলেন, ‘হাসপাতালে অডিট টিম আসবে। আজ আমার ছুটি থাকার পরও ডিউটি করছি। ডেঙ্গু ওয়ার্ড পরিষ্কার করা হলে বাইরে থাকা রোগীদের ভেতরে নিয়ে আসা হবে। এটি নিয়ে বেশি কথা বলার সময় নেই।’
এ বিষয়ে জানতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক মো. হেলাল উদ্দিনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) চিকিৎসক সৈয়দ মহি উদ্দিন আবদুল আজিমকে একাধিকবার কল দিলেও ধরেননি।