অপেক্ষার পালা শেষ, এবার ট্রেনে পদ্মা পাড়ি
বাংলাদেশ

অপেক্ষার পালা শেষ, এবার ট্রেনে পদ্মা পাড়ি

অপেক্ষার পালা শেষ। এবার পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় যাচ্ছে ট্রেন। বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে ঢাকা থেকে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে নিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেনটি যাচ্ছে ভাঙ্গায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই রেলপথে ঢাকার কমলাপুর, গেন্ডারিয়া, মুন্সীগঞ্জের নিমতলা ও মাওয়া স্টেশন, শরীয়তপুরের পদ্মা স্টেশন, মাদারীপুরের শিবচর এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনে যাত্রীরা ওঠানামা করতে পারবেন।

পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার অংশের রেলপথ সেপ্টেম্বরে চালুর কথা জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে প্রায় ৮২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে শতভাগ কাজ সম্পন্ন করার কাজ চলছে। তবে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটারের রেললাইন চালু হওয়ার কথা রয়েছে আগামী বছরের জুন মাসে।

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, আগামী ১০ অক্টোবর উদ্বোধনের আগে বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত নবনির্মিত রেললাইনে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হবে। আগামী মাসে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ঢাকার সঙ্গে সংযোগকারী ৮২ কিলোমিটার রেলপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রেলমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন পরিষেবা দেওয়ার জন্য ১০ অক্টোবরকে অস্থায়ী তারিখ ধরে উদ্বোধনের জন্য এগিয়ে যাচ্ছি। উদ্বোধনের তারিখ প্রধানমন্ত্রীর সময়সূচির ওপর নির্ভর করবে।’

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান বলেন,‌ ‌‘চীন থেকে আমদানি করা সাতটি নতুন কোচ ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’

পদ্মা সেতু হয়ে সাতটি অত্যাধুনিক বগি নিয়ে ফরিদপুরের ভাঙা থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় চলতি বছর ৪ এপ্রিল। আর ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত একটি ট্রাক কার চালিয়ে রেলপথের ট্রায়ালে যায় ১৯ আগস্ট। বৃহত্তর এই প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। 

মাওয়া হতে ঢাকার ৪১ কিলোমিটারের এই রেলপথে বিভিন্ন স্থানে ছিল জলাশয়। এর পাশাপাশি সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই স্থাপন করা হয়েছে বিশ্বমানের রেললাইন, জানান পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা এ এস ফয়সাল।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সয়েল টেস্ট করেই আমরা ডিজাইনটা করি। আবার সেই ডিজাইন অনুযায়ী একচুয়াল যে গ্রাউন্ড ছিল, সে অনুযায়ীও কোথাও কোথাও সয়েল ইমপ্রুভমেন্ট করেছি। যেখানে করা যায়নি, সেখানে ধাপে ধাপে মাটি ফেলে একটা লেভেল পর্যন্ত গিয়েছি।’

তিনি জানান, এই পদ্মা রেল সেতুর রেলওয়ের কাজের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৫ শতাধিক চাইনিজ প্রকৌশলী। একই সঙ্গে বাংলাদেশের স্থানীয় বিভিন্ন ধরনের প্রকৌশলী, সুপারভাইজার, লেবারসহ ৫ হাজারেরও বেশি এই প্রকল্পে কাজ করছেন।

চলতি মাসেই ঢাকা-মাওয়া পর্যন্ত রেললাইনের কাজ সম্পন্ন করা হবে। তবে রেল স্টেশনের কাজ সম্পন্ন হতে আর কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। 

পদ্মা সেতু রেল সংযোগের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ জামিউল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দেশের বর্তমানে দ্বিতীয় বৃহত্তর প্রজেক্ট, যেটার আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন স্থাপন করা হচ্ছে। আমরা আমাদের গুণগত মান বজায় রেখে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ সার্বক্ষণিকভাবে সম্পাদন করা হচ্ছে।

তিনি জানান, প্রকল্পটির ঢাকা থেকে ভাঙ্গা ‘ফেইজ-১’ এবং ভাঙা থেকে যশোর পর্যন্ত ফেইজ-২। ইতোমধ্যে ফেইজ-১ এর কাজ ৯৭ ভাগ শেষ হয়েছে। এই অংশে একটি ট্রায়াল রানও সম্পন্ন হয়েছে। ফেইজ-১ এর ইতিমধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পযন্ত ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে একটি ট্রায়াল রানও সম্পন্ন হয়েছে। আর ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৮২ শতাংশ। আমাদের এই প্রকল্পের এই অংশে দেশের দীর্ঘতম রেলওয়ে ভায়াডাক্ট রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ১৭ কিলোমিটার। এটির কাজও সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে এখানে ট্র্যাক নির্মাণের কাজ চলছে। 

নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এখানে যে ট্র্যাক নির্মাণের কাজ চলছে, সেটা অত্যাধুনিক। রেলওয়েতে এই প্রথম এই ধরনের ট্র্যাক ব্যবহার করা হচ্ছে। যে ট্র্যাকগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে, তাতে মেকানিক্যাল সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে।

এই রেলপথে নিমতলা স্টেশনের কাজও ইতোমধ্যে ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্টেশনগুলো শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার উপযোগী করে ডিজাইন নিশ্চিত করা হচ্ছে।’

দেশের বৃহত্তম এই প্রকল্পে কাজ করতে পেরে খুশি এখানকার শ্রমিকরা। আর প্রকৌশলীরা মনে করছেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে তাদের নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে।

নিমতলা স্টেশনের সেফটি ডিপার্টমেন্টের শ্রমিক মো. অনিক বলেন, ‘আমি এত বড় প্রকল্পে যুক্ত হয়ে নিজেকে খুব গর্ববোধ মনে করি। আমাদের বাংলাদেশের ভেতরে এত বড় বড় মেগা প্রকল্প আছে। এখান থেকে আমরা অনেক কিছু শিখছি। যেটা আমাদের ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশে যদি কর্মক্ষেত্রেও যাই আমাদের কাজে লাগবে। আমরা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি, যেটি আগে আমরা কখনও কল্পনাও করতে পারিনি।’

চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সহকারী প্রকৌশলী সম্রাট পারোমানিক জানান, আমাদের অধীনে তিনটি স্টেশন রয়েছে নিমতলা, শ্রীনগর ও মাওয়া স্টেশন। এর মধ্যে নিমতলা স্টেশনে ডরমিটরি অফিস বিল্ডিংগুলো এবং স্টেশন বিল্ডিং এর কাজ প্রায় শেষের দিকে। আগামী মাসে এটি উদ্বোধন হওয়ার কথা আমরা সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছি। কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারবো। এই প্রজেক্টে আমি কাজ করে গর্ববোধ করি এবং অনেক আনন্দিত।

কাজ করছেন শ্রমিকরা

রেল পথ চালু হওয়ার দিনক্ষণে মুখিয়ে আছে মুন্সীগঞ্জ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা শাহআলম মিয়া বলেন, ‘গতবছর আমাদের পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। আর কয়েকদিন পর রেল চালু হবে। দক্ষিণবঙ্গের মানুষ খুব সহজে ঢাকায় আসা যাওয়া করতে পারবে আমার খুব ভালো লাগছে। ঢাকায় গিয়ে কাজ শেষ করে দিনে দিনেই বাড়িতে ফিরতে পারবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।’

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, চলতি মাসের শেষ দিকেই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের টার্গেট রেখে খুঁটি-নাটি কাজ চলছে। আর ৭ সেপ্টেম্বর রেলপথমন্ত্রীকে নিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন যাবে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা। 

তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার অংশের অগ্রগতি ৯০ শতাংশের বেশি। পদ্মা সেতু ঘিরে দেশের নতুন রেল নেটওয়ার্কের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হতে যাচ্ছে ভাঙ্গা জংশন। এখানকার ১০টি রেললাইনের মধ্যে ছয়টি লাইন চালুর পথে। আর ২২টি ভবনের মধ্যে ২১টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সার্বিক অগ্রগতি ৭০ শতাংশ।

২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালে।

Source link

Related posts

মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকছে ভারী অস্ত্র

News Desk

স্কুল থেকে ফেরার পথে শিক্ষার্থী নিহত

News Desk

মঙ্গলবার থেকে বন্যার প্রকোপ কমবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

News Desk

Leave a Comment