ইলিশের প্রজনন মৌসুমের জন্য ২২ দিন বন্ধ ছিল মাছ ধরা। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষে নদীতে নামেন জেলেরা। কিন্তু ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। শূন্য হাতে হতাশা বুকে নিয়ে জেলেরা তীরে ফিরছেন। অভিযানের ২২ দিন ধারদেনা করে সংসার চালালেও আশা ছিল নিষেধাজ্ঞা শেষে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাবে, সেই মাছ বিক্রি করে দেনা পরিশোধ হবে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা শেষে সেই আশা পূরণের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
ভোলায় নিবন্ধিত ১ লাখ ৬৮ হাজারসহ জেলের সংখ্যা ২ লক্ষাধিক। তাদের বেশিরভাগই ইলিশের মৌসুমের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। কিন্তু এবার দুঃশ্চিন্তা ও হতাশায় পড়েছেন জেলে, আড়তদার ও দাদন ব্যবসায়ীরা। অনেক আশা নিয়ে বাজার-সদাই ও ইঞ্জিনের তেলসহ কয়েক হাজার টাকা খরচ করে ইলিশ শিকারে নেমেছেন ছেলেরা। অথচ এখনও সেই বাজারের খরচও না ওঠায় নিরাশ হয়ে পড়ছেন অনেক জেলে। আড়তে ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় মোকামের দাদন নিয়ে চিন্তিত আড়ৎদাররাও।
সরেজমিনে ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা ও কয়েকটি মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে, জেলেরা নদীতে ইলিশ শিকারে নেমেছেন। আবার কেউ কেউ ইলিশ বিক্রির জন্য ঘাটের আড়তগুলোয় নিয়ে আসছেন। আড়তে ইলিশ বিক্রির পর খরচের হিসাব মেলাতে গিয়েই তাদের মাথায় হাত। কারও ট্রলারের তেলের খরচই ওঠেনি, আবার কেউ ভাগে পেয়েছেন মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
১০ জন মাঝি-মাল্লাসহ মেঘনায় ইলিশ শিকারে গিয়েছেন রাজাপুরের ফারুক মাঝি। তিনি বলেন, অভিযান শেষে আমরা ধারদেনা হইয়া আসছি নদীতে মাছ ধরতে। নদীতে এখন মাছ কম। নিজেদের চলতেই কষ্ট। আগামী দিনে কীভাবে চলব আল্লাহই ভালো জানে।
ভোলার খাল মাছ ঘাট এলাকার জাহের মাঝি বলেন, রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত জাল বাইছি। মাছ পাইনি বললেই চলে। মনে করছি বড় বড় ইলিশ মাছ পাবো। বিগত দিনের দেনা তো আছেই। আশা করছিলাম ইলিশ মাছ ধইরা দেনা পরিশোধ করব। মোট ৯টা ইলিশ পাইছি, মাত্র ২১৫০ টাকা বিক্রি হইছে।
ইলিশা তে-মাথা ঘাটের নিরব মাঝি বলেন, রাতে গাঙ্গে গিয়ে দুপুর বেলায় আসছি। ঘাটে মাছ বিক্রি করে ১৮০ টাকা করে সবাই ভাগে পাইছি। এখন নদীতে গেলে আমাদের সংসারই চলে না।
তুলাতুলি মেঘনা এলাকার আবুতাহের মাঝি বলেন, নদীতে গিয়ে ১২৭০ টাকার মাছ পাইছি। এতে আমাদের তেলের টাকাই ওঠেনি। নদীতে বড় ইলিশ এক্কেবারেই নেই, একটাও পাইনি, খুব লসে আছি।
ভোলার খাল মাছঘাটের আড়ৎদার আরিফ হোসেন, ইলিশা চডার মাথা মাছঘাটের আড়তদার মো. কামাল ব্যাপারী ও তুলাতুলি মাছঘাটের আড়ৎদার সবুজ ব্যাপারী এর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলেরা নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়ায় হতাশ তারাও। তারা বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আমরা আড়ত খুলেছি, জেলেরাও নদীতে গেছে। গত বছরের তুললায় এ বছর অভিযানের পর ইলিশ তিন ভাগের একভাগ ও নেই। ইলিশের সরবরাহ কমের কারণে আমাদের ব্যবসার পরিস্থিতি অনেক খারাপ। ইলিশ থাকলে ব্যবসা চাঙা থাকতো। বিভিন্ন মোকাম থেকে দাদন এনেছি, এখন আমরা হতাশাগ্রস্ত।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, যে ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়তে এসেছে সেগুলো সাগরে ফিরে গেছে। যার কারণে জেলেদের জালে কম ইলিশ ধরা পরছে। তবে সামনে জেলেরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাবেন বলে আশাবাদী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, গত ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, মজুদ ও বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় মৎস্য বিভাগ। নিষেধাজ্ঞা শেষে ৩ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টার পর থেকেই ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ শিকারে নামেন এ সব অঞ্চলের জেলেরা।
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভোলায় ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। ভোলা জেলায় গত ৫ বছরের মধ্যে ইলিশের সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা এটি।