‘ঈদের দিন প্রধানমন্ত্রীকে সেমাই খাওয়াতে চাই’
বাংলাদেশ

‘ঈদের দিন প্রধানমন্ত্রীকে সেমাই খাওয়াতে চাই’

‘নিজের জায়গা ও বাড়িঘর কিছুই ছিলো না। ১৪ বছর ধরে দুঃখ-কষ্টের মধ্যে অন্যের ঘরে থেকেছি। ঘর কিংবা জায়গা কেনার সামর্থ্য ছিলো না। অবশেষে উপহারের ঘর পেয়েছি। স্বপ্নেও ভাবিনি পাকা ঘরে ঈদ করবো। তাই ঈদের দিন সেমাই রান্না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খাওয়াতে চাই।’

এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার পোড়াদিয়া বাজারের বটতলার ফুটপাতের চা বিক্রেতা জাকির হোসেন। মঙ্গলবার তৃতীয় দফায় তাকে জমিসহ ঘর উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাকিরের সঙ্গে তৃতীয় দফায় উপজেলায় আরও ১১০ পরিবার জমিসহ ঘর পেয়েছে। এ নিয়ে উপজেলায় জমিসহ ঘর পেলো ৪৩৫ পরিবার। উপহারের ঘরে প্রথম ঈদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উদযাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এসব ঘরের বাসিন্দারা। কেউ কেউ নতুন ঘরে ঈদের দিন সেমাই রান্না করে প্রধানমন্ত্রীকে খাওয়াতে চেয়েছেন। কেউ চেয়েছেন ডাল-ভাত খাওয়াতে। কিন্তু এই স্বপ্নপূরণ হবে কিনা তা জানা নেই তাদের।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর জেলায় তিন দফায় চার হাজার ৯৯৪ পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ইতোমধ্যে প্রথম দফায় দুই হাজার ৩৫, দ্বিতীয় দফায় এক হাজার ৫৭২ ও তৃতীয় দফায় ৬৯৬ ঘর দেওয়া হয়েছে। বাকি ৬৯১ ঘর পরবর্তী সময়ে দেওয়া হবে। 

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নগরকান্দা উপজেলার কাফই কাইচাইল এলাকায় জমিসহ ঘর হস্তান্তর করেন। মঙ্গলবার ১১০ ঘর দেওয়ার মাধ্যমে ‘ক’ শ্রেণির ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত হলো নগরকান্দা।

জাকির হোসেন বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ১৪ বছর ধরে কাইচাইল এলাকায় শ্বশুর আফসার মাতবরের বাড়িতে থাকতাম। নিজের জমিজমা নেই। স্কুলপড়ুয়া দুই সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করেছিলাম। ঈদ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে জমিসহ ঘর দিয়েছেন। এতে আমি অনেক খুশি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এবার নিজের ঘরে ঈদ করবো। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ঈদ করার স্বপ্ন ছিল। ঈদের দিন তাকে সেমাই রান্না করতে খাওয়াতে চাই।’

স্বামী পবিত্র মালোকে নিয়ে মাঝিকান্দায় চাচা শ্বশুর উত্তম মালোর বাড়িতে থাকতেন বাসন্তী রানী (৪৫)। তিন মেয়ের মধ্যে এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। অপর দুই মেয়ের একজন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে। অপরজন পুরদিয়া স্কুলে পড়ে। স্বামী নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করেন। বাড়ি না থাকায় মেয়েদের বিয়ে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন বাসন্তী। এবার তার দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে। 

কাঠমিস্ত্রি নূরে আলম বলেন, ‌‘আমি দিনমজুর। দিনে আনি দিনে খাই। অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। নিজের বাড়ি ছিলো না। যাদের বাড়ি আছে তারা কোনোদিন বাড়ি না থাকা মানুষের কষ্ট বুঝবে না। বছরের পর বছর মানুষের বাড়িতে থেকেছি। এ নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। খুব খারাপ লাগতো। প্রধানমন্ত্রী মনের কষ্ট দূর করেছেন। এখন বলতে পারবো, নিজের ঘরে থাকি। ঈদের দিন প্রধানমন্ত্রী যদি আমার ঘরে আসতেন, একসঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া করতেন; তাহলে মনটা ভরে যেতো।’

একই এলাকার জান্নাতি আক্তার ও সোহরাব হাসান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে উপহারের ঘরে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারলে অনেক খুশি হতাম। আমাদের এই স্বপ্ন কখনও পূরণ হবে কিনা জানি না।’

নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেতী প্রু বলেন, ‘উপজেলায় প্রথম দফায় ২১৫, দ্বিতীয় দফায় ১১০ ও তৃতীয় দফায় ১১০ ঘর বিতরণ করা হয়েছে। অসহায় পরিবারগুলো মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন। ফলে উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা শূন্যে নামলো।’

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘নগরকান্দা উপজেলা ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত হলো। উপকারভোগী পরিবারের সদস্যদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক উপজেলায় অধিকাংশ ঘর স্থানীয় গ্রোথ সেন্টারের কাছে স্থাপন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ সুবিধা ও বিশুদ্ধ খাবার পানি উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ফরিদপুরের একটি পরিবারও গৃহহীন থাকবে না। বাসিন্দাদের সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ এবং ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সবমিলে জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার ভূমিহীনকে ঘর ও জমি দেওয়া হয়েছে।’

Source link

Related posts

যে কৌশলে ঝিরির পানি যাচ্ছে পাহাড়ি পাড়ায়

News Desk

শীতে বেড়েছে রস, যশোরে তৈরি হবে শত কোটি টাকার গুড়

News Desk

খালেদার বিদেশে চিকিৎসার ‘উপায় খুঁজছে’ বিএনপি

News Desk

Leave a Comment