কক্সবাজার সৈকতে ৩ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে ২৪৫টি প্রতিমা বিসর্জন
বাংলাদেশ

কক্সবাজার সৈকতে ৩ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে ২৪৫টি প্রতিমা বিসর্জন

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টে কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতিতে ২৪৫টি প্রতিমা সাগরে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। রবিবার (১৩ অক্টোবর) বিকাল ৫টায় মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন শুরুর ঘোষণা দেন শহরের ঐতিহ্যবাহী সরস্বতী বাড়ি মন্দিরের পুরোহিত স্বপন ভট্টাচার্য। সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় প্রতিমা বিসর্জন শেষ হয়।

প্রতিমা বিসর্জন উৎসবকে ঘিরে সমুদ্রসৈকতসহ পুরো শহরে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবার জেলায় ৩২১টি মণ্ডপে পূজা হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ৫৯টি মণ্ডপের ২৪৫টি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

এদিন সকাল থেকে পর্যটকরা দলবেঁধে সৈকতে নামতে শুরু করেন। দুপুর ১২টার আগেই কলাতলী, সুগন্ধা, সিগাল ও লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটে। বেলা ২টা থেকে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে সৈকতে নামেন আরও লক্ষাধিক মানুষ। বিকাল ৩টা থেকে কক্সবাজার পৌরসভা; রামু, ঈদগাঁও, উখিয়া, টেকনাফসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ট্রাকের বহরে প্রতিমাগুলো লাবণী পয়েন্টে আনা শুরু হয়। এ সময় ভক্তরা নেচেগেয়ে আনন্দ-উল্লাস করেন। আতশবাজি ফাটানো হয়।

অনুষ্ঠানের জন্য বালুচরে তৈরি করা হয় বিজয়া মঞ্চ। বিকাল ৪টায় দুই শতাধিক প্রতিমা বিজয়া মঞ্চের সামনে রেখে ভক্তদের পূজা-অর্চনা শুরু হয়। দুর্গাদেবীর প্রতিমায় শেষ মুহূর্তের পূজায় মগ্ন হয়ে পড়েন শত শত নারী-পুরুষ। ততক্ষণে বিজয়া মঞ্চের সামনের বালুচরে সমাগম ঘটে তিন লাখের বেশি পর্যটক, পূজারি ও দর্শনার্থীর।

বিকাল ৪টার দিকে বিজয়া মঞ্চে শুরু হয় আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) উদয় শংকর পালের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ, র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান, কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান, কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক রোবাইয়া আফরোজ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা, দুর্গাপূজা উদযাপন সমন্বয় পরিষদের উপদেষ্টা সোমেশ্বর চক্রবর্তী এবং আহ্বায়ক দুলাল কান্তি চক্রবর্তী প্রমুখ।

সভায় জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘কয়েক লাখ মানুষ সৈকতে উপস্থিত হয়েছেন। দেশের সবচেয়ে বৃহৎ প্রতিমা বিসর্জন উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ায় খুশি দর্শনার্থীরা।’

সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় প্রতিমা বিসর্জন শেষ হয়

বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান বলেন, ‘তিন লাখের বেশি মানুষের উপস্থিতিতে সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন উৎসব প্রমাণ করে কক্সবাজার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জায়গা। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় আমরা ঐক্যবদ্ধ।’ 

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) উদয় শংকর পাল বলেন, ‘এ বছর জেলার ৯ উপজেলায় ৩২১ মণ্ডপে পূজা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫১টি প্রতিমা ও ১৭০টি ঘটপূজা। শুধু কক্সবাজার সৈকতে নয়, রামুর বাঁকখাল নদী, চকরিয়ার মাতামুহুরী, টেকনাফের সাগর ও নাফ নদ, উখিয়ার ইনানী সৈকত এবং রেজু নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। বিসর্জন উৎসব উপভোগ করেন তিন লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে দেড় লাখ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটক। কোনও ধরনের অঘটন ছাড়াই প্রতিমা বিসর্জন উৎসব সম্পন্ন হওয়ায় জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’

বিকাল ৫টায় বিসর্জন মন্ত্র পাঠ করেন শহরের শতবর্ষী সরস্বতী বাড়ি মন্দিরের পুরোহিত। এরপর শুরু হয় সাগরের পানিতে প্রতিমা বিসর্জন। মাত্র ৪৫ মিনিটে একে একে ২৪৫টি প্রতিমা সাগরে বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জন অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করে নৌবাহিনী ডুবুরি দল, ২৭ জন সি-সেফ লাইফ গার্ড, ৩৫ জন বিচকর্মীসহ ট্যুরিস্ট পুলিশের শতাধিক সদস্য।

সমুদ্রসৈকতসহ পুরো শহরে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, ‘পর্যটক ও পূজারিদের নিরাপত্তায় আমাদের কন্টোল রুম চালু করা হয়েছিল। আমাদের সঙ্গে র‌্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা কাজ করেছেন। এখানে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’

জেলা পুলিশ সুপার মো. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতিতে বোঝা যায় এ যেন এক সম্প্রীতির বাংলাদেশ। সবার ভালবাসায় বিসর্জন দেওয়া হলো প্রতীমা।’

 

Source link

Related posts

‘মানবপাচারের’ অভিযোগে গ্রেপ্তার ৫, উদ্ধার ১৬ জন

News Desk

যশোরে করোনায় ৫ জনের মৃত্যু

News Desk

রাবির মতিহার হল: মধ্যরাতে শিক্ষার্থীকে বের করে দিল ছাত্রলীগ

News Desk

Leave a Comment