কাজে ফিরেছে পুলিশ, জনমনে স্বস্তি
বাংলাদেশ

কাজে ফিরেছে পুলিশ, জনমনে স্বস্তি

বরিশাল মেট্রোপলিটন ও জেলার ১৪ থানার পাশাপাশি ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সদস্যরা মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন। সোমবার (১২ জুলাই) সকাল থেকে নিজ নিজ কর্মস্থলে হাজিরা দিয়ে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন তারা। নগরী এবং ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম দেখে মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নগরের ব্যস্ততম সড়কগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এ সময় তাদের প্রতি হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা গেছে অনেক পথচারী, যানবাহন চালক ও যাত্রীদের। পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের কাজে আনসার-ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস, বিএনসিসি, স্কাউট, গার্লস গাইড ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে দেখা গেছে। তাদের যেকোনও সমস্যায় পাশে থাকার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

বরিশাল নগরীর বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. জামান হোসেন বলেন, ‘সরকার পতনের পর পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন না করায় সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। সর্বত্র ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছিল। মানুষ ঘরে থেকেও যেন নতুন একটি জায়গায় বসবাস করার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেনি অনেকে। পুলিশ সদস্যরা কাজে ফেরায় সেই অবস্থা থেকে রেহাই মিলেছে। সবার মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।’

নগরীর রিকশাচালক আলী হোসেন বলেন, ‘পুলিশের অনুপস্থিতিতে অরাজক পরিস্থিতি নিয়ে অনেকটা আতঙ্কে দিন কাটিয়েছি। সর্বশেষ ৫ আগস্ট পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখেছি। মঙ্গলবার পুলিশ সদস্যদের মাঠে দেখেছি। গত কয়েকদিন কীভাবে কেটেছে তা বলতে পারবো না, তবে সড়কে শিক্ষার্থী ভাইবোনদের সরব উপস্থিতি যেমন আমাকে সাহস জুগিয়েছে তেমনি ভোগান্তি ছাড়াই চলাচল করতে পেরেছি। শিক্ষার্থীরা রাত জেগে পাহারা দিয়েছে, একইসঙ্গে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজ করেছে। এজন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকা গার্লস গাইডের সদস্য ছানাসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সরকার পতনের পর থেকে লেখাপড়া ছেড়ে সড়কে আছি। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা চালিয়েছে। বর্তমানে পুলিশ সদস্যরা কাজে ফিরে আসায় তাদের কাছ থেকে কিছু টিপস নিয়ে সেভাবে দায়িত্ব পালন করছি। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ জুগিয়েছে সাধারণ মানুষ। তারা প্রতিটি মুহূর্তে উৎসাহ দিয়েছে। খাবার থেকে শুরু করে যা প্রয়োজন তা নিয়ে হাজির হয়েছেন তারা। যার ফলে দায়িত্ব পালনটা সহজ হয়েছে আমাদের।

সড়কে দায়িত্ব পালন করা একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিশু, সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। যা কারও কাম্য ছিল না। পুলিশ সদস্যদের অতিরিক্ত গুলির কারণে শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সেই দূরত্ব দূর করতে হলে প্রথমে প্রয়োজন হবে পুলিশের পোশাক পরিবর্তন। একইসঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের দাবি, পুলিশ সদস্যরা রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার হবে না। তারা ব্যবহার হবে রাষ্ট্রের কাজে। এতে করে পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দূরত্ব কমে আসবে।

দায়িত্ব পালন শুরুর পর কনস্টেবল বশির বলেন, ‘অনেক দিন পরে মাঠে নেমেছি। কিছুটা উৎকণ্ঠা থাকলেও ভালো লাগছে। দিন যত যাবে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’

ট্রাফিক পুলিশের সবাই কাজে নেমে পড়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত। তিনি বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তাদের মনোবল দৃঢ় আছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা তাদের দায়িত্বপালন শুরু করেছেন। দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে তারা নগরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবেন। দুই-একটি স্থানে এখনো দায়িত্ব বণ্টন শেষ হয়নি। তবে মঙ্গলবার বরিশালের প্রতিটি পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ ছিল।’

ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের কাজে আনসার-ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস, বিএনসিসি, স্কাউট, গার্লস গাইড ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে দেখা গেছে

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জিহাদুল করির বলেন, ‘আমাদের পুলিশ বরিশালের মাঠ থেকে কখনও চলে যায়নি। তারা থানাতেই ছিলেন। সোমবার সকাল থেকে সবাই যার যার দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। ট্রাফিক পুলিশও কাজে নেমেছেন। আমরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি এবং করবো। পুলিশের জন্য কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত যখন যাই হবে, তা-ই বাস্তবায়ন করতে হবে।’

এদিকে, টানা ছয় দিন কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর ও গৌরনদী হাইওয়ে থানার কার্যক্রম সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। একইভাবে কাজে ফিরেছেন বাকেরগঞ্জ, মেহেন্দীগঞ্জ, মুলাদী, হিজলা, বাবুগঞ্জ ও বানারীপাড়া থানা পুলিশ।

পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার থেকে বরিশাল জেলার ১০ থানা পুলিশের পাশাপাশি ট্রাফিক সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন। প্রতিটি সদস্য তাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন।’

গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে পুলিশ ১১ দফা দাবি আদায়ের জন্য কর্মবিরতি পালন করা হয়। ১১ দফা দাবি প্রত্যাহারের পর এবং পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে কার্যক্রম শুরু করেছি আমরা।’

Source link

Related posts

আব্দুল হালিম রেলসেতুতে আগুন

News Desk

খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা

News Desk

পূজার সাঁওতালি নাচে মাতোয়ারা পাহাড়ি পাড়া

News Desk

Leave a Comment