দৃষ্টিশক্তিহীন বৃদ্ধ বাবা জয়নাল আবেদিন হাওলাদার ছেলের শোকে বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। বাবা হারা চার সন্তানের কান্নায় অন্য সবার চোখেও পানি। এই পরিবারটির আর্তনাদ, এখন কীভাবে চলবে তাদের সংসার? তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী রিপন হাওলাদার (৩৫) যে বাকিদের অনিশ্চয়তায় রেখে চলে গেছেন পরপারে।
ঢাকার সদরঘাটে ঈদের দিন বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকালে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে গায়ে পড়ে নিহত ৫ জনের মধ্যে রিপন হাওলাদার একজন। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে রিপনের কফিনবন্দি মরদেহটি পটুয়াখালী সদর উপজেলার শিয়ালীতে তার বাড়ি এসে পৌঁছায়। এসময় তার সন্তান, বৃদ্ধ বাবা, ভাই-বোনদের কান্নায় এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ তৈরি হয়। এলাকাবাসীর চোখও ভিজে উঠে কফিন জড়িয়ে ধরে রিপনের স্বজনদের আহাজারিতে।
রিপন ঢাকার বাড্ডার নতুন বাজার এলাকায় থাকতেন। পাঠাওয়ের শেয়ারিং রাইডে মোটরসাইকেল চালাতেন। এর আগে প্রায় ২০ বছর স্টার জুস কোম্পানিতে কাজ করলেও এক বছর আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে রাইড শেয়ারিংয়ে যোগ দেন তিনি।
শিয়ালী গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার তিন মেয়ে, এক ছেলে, দৃষ্টিশক্তিহীন বৃদ্ধ বাবা, পাঁচ ভাই আর সাত বোনসহ আত্মীয়-স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে হয়ে ওঠেছে।
রিপনের ছোট ভাই আল আমিন জানান, ঈদের দিন বিকালে ভাতিজিকে নিয়ে বাড়ি আসার জন্য বরগুনাগামী তাশরিফ-৪ লঞ্চে ওঠার আগে সদরঘাটে পন্টুনে দাঁড়ান তিনি। এ সময় অপর একটি লঞ্চের ধাক্কায় তাশরিফ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে রিপনের মাথায় আঘাত লাগলে সেখানেই তিনি লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে ঢাকার মিডফোর্ট হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
স্বজনরা জানান, রিপন হাওলাদারের আয়েই মূলত চলতো তাদের সংসার। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাই রাসেল, মুছা আর আল-আমিন কলেজে পড়াশোনা করছে। মেঝো ভাই সোহেল হাওলাদার (৩০) অটো রিক্সাচালিয়ে সামান্য রোজগার করে। সাত বোনের সবার বিয়ে হলেও তাদের খোঁজখবর রাখতেন রিপন। বছরে শুধু ঈদের সময় বাড়িতে আসতেন তিনি।
রিপনের সন্তানদের মধ্যে রিয়ামনি সপ্তম শ্রেণিতে, রিফাত ষষ্ঠ শ্রেণিতে, মেঘলা, পঞ্চম শ্রেণিতে আর বৃষ্টি তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।
কলেজ পড়ুয়া ছোট ভাই আল আমিন বলেন, ভাইয়ের পাঠানো টাকায় আমাদের তিন ভাইয়ের লেখাপড়াসহ চলতো সংসার।
রিপনের স্ত্রী নার্গিস বেগম জানান, প্রায় ২০ বছর ঢাকায় স্টার জুস কোম্পানিতে চাকরি করতেন রিপন। সেখানের বেতনে সংসার চালাতে কষ্ট হওয়ায় এক বছর আগে চাকরি ছেড়ে পাঠাও-এ মোটরসাইকেল চালানো শুরু করেন। তার আয় দিয়েই মূলত ১২ সদস্যের পরিবারটি চলতো। কিন্তু এখন কীভাবে চলবে সংসার কেউ জানেন না।
শুক্রবার বিকালে রিপনের মরদেহ পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়।
জানতে চাইলে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম জানান, পরিবারটিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন-
সদরঘাটে লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে ৫ জনের মৃত্যু
দুটি লঞ্চের রুট পারমিট স্থগিত, আটক ৫
সদরঘাটে নিহতদের মধ্যে তিন জন একই পরিবারের
সদরঘাটে দড়ি ছিঁড়ে হতাহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি
সদরঘাটে এক লঞ্চকে অর্থদণ্ড, ৫টির রশি জব্দ