খুলনায় বন্যায় ভেসে গেছে ৩৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকার মাছ
বাংলাদেশ

খুলনায় বন্যায় ভেসে গেছে ৩৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকার মাছ

খুলনায় ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় পুকুর, জলাশয় ও ঘের তলিয়ে ৩৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। পাশাপাশি কৃষি ও গবাদিপশু খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনও জেলার অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বুধবার (২৮ আগস্ট) জেলা মৎস্য দফতর তাদের ক্ষতির পরিমাণ জানিয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বন্যার পানির স্রোতে পাইকগাছা ও দাকোপে বাঁধ ভেঙে যায়। দিঘলিয়া ও ডুমুরিয়ায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে এক হাজার ১৭৫ হেক্টর রোপা আমন, বীজতলা নষ্টসহ বিভিন্ন শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। দুই হাজার ১০০ হেক্টর জমির দুই হাজার ৬৬৫ ঘের, পুকুর ও জলাশয় ভেসে গিয়ে ৩৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৪০ হাজার গবাদিপশু বন্যাকবলিত হয়েছে। পাঁচ হাজার ৫০৫টি গবাদিপশু মারা যাওয়ায় ৮৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। পাইকগাছার দেলুটিতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সংকট দেখা দিয়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থায়ও।

খুলনার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. ইউসুফ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের কালিনগরে জোয়ারের পানির চাপে গত ২২ আগস্ট ১২০ মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। এতে ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩ গ্রাম প্লাবিত হয়। ২৬ আগস্ট বাঁধটি আটকানোর ফলে বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে দেলুটির দুই হাজার ৪৬৬ পরিবারের ১৩ হাজার ৯৮৬ জন পানিবন্দি রয়েছেন। বন্যাকবলিত দেলুটি ইউনিয়নে ইতোমধ্যে ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্যোগ কবলিত স্থানসমূহ থেকে চার হাজার ২৪ জনকে এবং ৪১৪টি গবাদিপশু আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। বন্যাকবলিতদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত করা হয়েছে।’

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনিন বলেন, ‘অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। পানির সংকট নিরসনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সহযোগিতায় দারুন মল্লিক বাজারে অস্থায়ী মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে।’

পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশ বলেন, ‘বন্যায় দেলুটিতে ২২৫ হেক্টর আমন বীজতলা, ৯৫০ হেক্টর রোপা আমন, ২৫ হেক্টর সবজিসহ এক হাজার ২২২ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে।’ 

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্যায় দিঘলিয়া, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়ায় দুই হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আমন বীজতলা ও রোপা আমন রয়েছে। আমন মৌসুমে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পাঁচ টন বীজের প্রয়োজন হবে। মন্ত্রণালয়ে এর চাহিদা পাঠানো হয়েছে। চাহিদামতো পেলে তা কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, ‘অতি বৃষ্টিতে পাইকগাছার দুই ইউনিয়নের ১৬৫ পুকুর ও ৫৬০ হেক্টর দীঘি, এক হাজার ২০০টি ঘের (৭০০ হেক্টর) ভেসে গেছে। এতে ৬৫ টন সাদা মাছে ভেসে গিয়ে এক কোটি ১৫ লাখ, ৭২ টন চিংড়ি ভেসে গিয়ে দুই কোটি ৯০ লাখ, ১০০ লাখ পোনা মাছ ভেসে গিয়ে তিন কোটি ৪৫ লাখ, ৭০ লাখ চিংড়ি পোনা ভেসে গিয়ে ২৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় মৎস্য খাতে পাইকগাছায় অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৪৫ লাখ টাকার। সবমিলিয়ে তিন কোটি ৬৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘খুলনায় মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৩৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে অবকাঠামোগত ক্ষতি আট কোটি ২৩ লাখ টাকা। ১২টি ইউনিয়নে ৪৬৫ পুকুর, ৭৫৩ হেক্টর দীঘি, দুই হাজার ২০০টি ঘের (১৩৪৬ হেক্টর) ভেসে গেছে। এতে ৪৫৫ টন সাদা মাছে পাঁচ কোটি ৮৫ লাখ, ৬৭২ টন চিংড়ি মাছে ২৪ কোটি ৪০ লাখ, ১০০ লাখ পোনা মাছে তিন কোটি ৪৫ লাখ, ৭০ লাখ চিংড়ি পোনায় ২৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরিচালক ডা. নুরুল্লাহ মো. আহসান বলেন, ‘বন্যায় দেলুটিতে তিনটি ছাগল, দুটি ভেড়া ও পাঁচ হাজার ৫০০ মুরগি মারা গেছে। এতে ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। আট খামারির দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। হাঁস-মুরগির ৫০ খামারির ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বন্যাতে ২১০ হেক্টর চারণ ভূমি জলাবদ্ধ হয়েছে। বন্যাকবলিত হয়েছে তিন হাজার ৫০০ গরু, পাঁচ হাজার ৩০০ ছাগল, এক হাজার ২৫০ ভেড়া, ২৫ হাজার মুরগি ও চার হাজার ৫০০ হাঁস। ফলে প্রাণী খাতে ৮৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। বুধবার সকালে পাইকগাছার দেলুটিতে ১০০ খামারির মাঝে ১০০ প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী ও ১১০ প্যাকেট পশুখাদ্য সরবরাহ করা হয়েছে।’

Source link

Related posts

চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েতে কমেছে টোল, চলবে ১০ ধরনের যান

News Desk

শেরপুরে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে, বাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

News Desk

আখাউড়া স্থলবন্দরে পচে গেলো ২০০ টনের বেশি গম

News Desk

Leave a Comment