খানসামা উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গত রাতের ঝড়ে হাজারো ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মৌসুমি ফল আম, লিচু, কলা, ভুট্টা ও ধানসহ বিভিন্ন ফসলের। ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও অনেক গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এতে পুরো উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে ভয়াবহ এই ঝড়ের পর হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার (১৮ মে) রাত ১০টার পর হঠাৎ ঝড়, শিলা বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। দুই দফার এই ঝড় প্রায় ঘণ্টা খানেক স্থায়ী ছিল। এ সময় ঝড়ের তাণ্ডবে উপজেলার আংগারপাড়া ইউনিয়নের সূর্বণখুলী ওকড়াবাড়ি এলাকায় প্রায় তিন শতাধিক, ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের বালাডাঙ্গী, চকরামপুর, হোসেনপুর, চকসাকোয়া, সরহদ্দ, ভেড়ভেড়ী, টংগুয়া মাদারপীর গ্রামের তিন শতাধিক ও আলোকঝাড়ি ইউনিয়নেও প্রায় দুই শতাধিক বাড়ি ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়।
এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরও প্রায় তিন থেকে চার শতাধিক বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রবল বাতাসে উড়ে গেছে ঘরের চালা। নষ্ট হয় ঘরে থাকা খাদ্য সামগ্রী। ঝড়ে উপড়ে পড়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গাছপালা, বিদ্যুৎ সঞ্চালনের তার ছিঁড়ে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। অনেক স্থানে ভেঙে গেছে বিদ্যুতের অসংখ্য খুঁটি ও মিটার। এছাড়া ঝড়ে গাছ উপড়ে রাস্তায় পড়ে থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর বেশিরভাগই বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন।
এদিকে ঝড়ে ঘর-বাড়ি বিধ্বস্তের পাশাপাশি বোরো ধান, ভুট্টা, করলা, শসা, আম ও লিচুর ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এতে দুশ্চিন্তা বেড়েছে স্থানীয় চাষিদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় জানান, ঝড়ে ৪৫ হেক্টর জমির বোরো ধান, ২৫ হেক্টরের পাট, ১০ হেক্টর জমির সবজি, ২৫ হেক্টর জমির আম ও ৩৫ হেক্টর জমির লিচর ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ফসলের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে মাঠে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
সূবর্ণখুলী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা বলেন, ঝড়ের সময় ঘুমিয়েছিলাম। হঠাৎ রাত ১০-১১টার দিকে ঝড়ে বাড়ির পাশের বড় বড় গাছ ঘরের ওপর পরতে থাকে। এতে ঘর ভেঙে আমাদের ওপর পড়ে। জীবন রক্ষায় ঘরের বেড়া ভেঙে আমরা বের হই। ঝড়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছি। নষ্ট হয়েছে আমাদের ফসল।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ও আংগারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা আহমেদ শাহ বলেন, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে তালিকা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এলাকার বিত্তবানসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশিদা আক্তার বলেন, ঘর-বাড়ি ও কৃষি খাতের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে ইউনিয়ন পরিষদ ও কৃষি বিভাগ কাজ করছে। তালিকা হাতে পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খাদ্য সামগ্রী, টিন ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।