ঘরের ভেতর হাঁটুপানি, অসহায় সিলেটের মানুষ
বাংলাদেশ

ঘরের ভেতর হাঁটুপানি, অসহায় সিলেটের মানুষ

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটে দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাটসহ জেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে গেছে। বসতঘরের ভেতরও পানি ঢুকে পড়েছে। 

সিলেট সদর উপজেলা, সিটি করপোরেশন, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। পানি বেড়েছে সুরমা, পিয়াইন ও কুশিয়ারাসহ জেলার সব নদীর। হু হু করে পানি বাড়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা।

নগরীর উপশহরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বন্যা কী ভয়ানক হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পরিবার নিয়ে সারারাত নিদ্রাহীন কাটিয়েছি। সবাই একটি কক্ষে মালামাল একত্রে রেখে কোনও লাভ হয়নি। সব পানিতেই ডুবে গেছে।’

তালতলার এলাকার গৃহিণী সানজিদা ইসলাম জানান, ‘ সিলেটের অবস্থা ভয়াবহ। বিশুদ্ধ পানিসহ খাবারের সংকটে আছি। বাসার সব মালামাল পানিতে ডুবে আছে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাটের ওপর বসে দিন কাটাচ্ছি।’

নগরীর বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, ‌‘রাস্তাঘাট, বাড়িঘর সব ডুবে গেছে। পুরো এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। আমরা ঘর থেকে বের হতে পারছি না। এখন পর্যন্ত কোনও উদ্ধারকারী পাইনি। ৯৯৯ নম্বরে সহায়তার জন্য ফোন দিয়েও পাইনি।’

বাংলা ট্রিবিউনের সিলেট প্রতিনিধি তুহিনুল হক তুহিন বলেন, ‘আমার ঘরে হাঁটুপানি। রাস্তায় কোমর সমান পানি। মানুষ দিশেহারা হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় অনেকেই পানিবন্দি। কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। আমি নিজেই বাড়ি ছেড়ে হোটেলে আশ্রয় নিয়েছি। উদ্ধার সহায়তার জন্য জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়েও সহায়তা পাইনি। আমার মতো একই অবস্থা এখানকার প্রায় সব মানুষের।’

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার ওপরে ও সিলেট নগর পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর দুটি ও কুশিয়ারা নদীর একটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার অন্য নদ-নদীর পানিও বাড়ছে।

এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, ছাতক ও সুনামগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

ছাতক ও সুনামগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্রে পানি ঢুকে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে

সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী সুজিত কুমার বিশ্বাস জানান, বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সব এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কারণ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন না করলে বন্যাকবলিত এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরেও পানি ঢুকেছে। 

এদিকে সিলেটে বন্যা মোকাবিলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার (১৭ জুন) সকালে এক বার্তায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এ তথ্য জানায়। এতে বলা হয়েছে, অসামরিক প্রশাসনের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছে। যাদের বাড়িঘরে পানি উঠেছে, তাদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলা হচ্ছে। দুর্গতদের ত্রাণ সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে।

Source link

Related posts

কয়রায় বন্যা দুর্গতদের মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ

News Desk

হাত বদলেই কেজিপ্রতি সবজির দাম বাড়ছে ২০-৪০ টাকা

News Desk

নিজের পাতা ফাঁদে কৃষকের মৃত্যু

News Desk

Leave a Comment